জুলাইয়ে ইউরোপে সন্ধ্যা নামে অনেক দেরীতে। পরতো শহরের প্রাণ কেন্দ্র দুরো নদীর তীর, শহুরে যা কিছু উত্তেজনা যেন এই নদীকে কেন্দ্র করে। সারা দিনের নদীর বুকে পাল তোলা আধুনিক নৌকোর নানান গতিবিধি এখন বন্ধ হয়েছে, বন্ধ হয়েছে মাইকের আওয়াজ। এক নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে পরিবেশে, ধীর পায়ে অনেকে সান্ধ্য ভ্রমনে বেড়িয়েছে।
এখানে নদীর এক তীরে Vila Nova de Gaia র দিকে পরতো ওয়াইনের সারি বাঁধা কেভ তো অন্য তীর Porto র দিকে সারি সারি রেস্টুরেন্ট। Douro নদীর উপরে Dom Luís ব্রিজ এই দুই তীরকে মিলিয়েছে। Vila Nova de Gaia এবং Porto এই দুই শহরকে নিয়েই Douro নদীর বয়ে চলা। সারাদিনে শহর দেখে দেখে ক্লান্ত আমরা দুরো নদীর বাঁধানো তীরের এক পর্তুগীজ রেস্টুরেন্টে বসে দুরো নদীর ওপারে পর্তুগীজ সূর্যাস্তের অপেক্ষায়, পরতো শহরের রাতের রূপ দেখার অপেক্ষায়। নদীর তীরে সারা দিন ধরে যে সব পর্তুগীজদের তৈরি হস্ত শিল্পের বাজার বসেছিল – দিনের বিকি কিনি শেষে ধীরে ধীরে ওরাও নিজেদের পসরা গুটিয়ে নিচ্ছে।
এক দু’টো ক্লান্ত সিগালের ঘরে ফেরার উদাসী চিৎকার, রেস্টুরেন্টের মানুষের গুঞ্জন ছাড়া আর কোন অহেতুক যান্ত্রিক শব্দ নেই এখানে। দেখেছি, যে কোন ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান শহরে সন্ধ্যা এক অদ্ভুত রহস্যময় অনুভূতি দেয়, মনে হয় যেন আমরা এক ঐতিহাসিক চরিত্র। অতীতের স্থাপত্যের গায়ে জ্বলে ওঠা হলুদ আলো এক রহস্যময়, মায়াবী, আলো আঁধারি এক পরিবেশ তৈরি করে।
ধূসর নীল সন্ধ্যা যখন গাঢ় আঁধারের দিকে ঢলে পড়ে – নদীর দুই তীরে একে একে সভ্যতার সমস্ত আলো জ্বলে ওঠে, মনে হয় দীপাবলির হাজার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। রাতে দুরো নদীর জলের কালো রঙে যেন হলুদ আলো গুড়ো গুড়ো হয়ে মিশে যায়, নদীর স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে তির তির করে কাঁপে সেই হলুদ আলোর মায়া যাদু।
পরতো অনেকটা পাহাড়ি শহর, তাই যখন সারা শহরের আলো ধাপে ধাপে জ্বলে ওঠে আরও অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়। দুরো নদী যেখানে সর্পিল ভঙ্গিতে বাঁক নিয়েছে, সেখানে নদীর বুকে আলো পড়ে আরও রহস্যময়, জ্বলজ্বলে সুন্দর ছবি তৈরি হয়। নদীর মতো জীবনও যখন বাঁক নেয় সুন্দর ও রহস্যঘন হয়। তাইতো, প্রতিটি বাঁকে জীবন সুন্দর।
Dom Luís ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে পরতো শহরে, দুরো নদীর বুকে হাজার প্রদীপ জ্বলা দেখতে দেখতে সময় বয়ে যায়। হু হু করা বাতাসে Dom Luís ব্রিজ কেঁপে কেঁপে ওঠে। রাত আরও গভীর হয়।