সিনেমার দিনগুলো – ৪ (THE ODESSA FILE)

ছুটির দিনে চ্যাটার্জি অ্যান্টির বাড়ীতে খাবার নিমন্ত্রণ মানেই সুস্বাদু খাদ্যের সঙ্গে এক ভালো সিনেমা দেখার নিমন্ত্রণও বটে। দুপুরের খাবার খেয়েই প্রচুর গল্পের ফাঁকে কফির কাপ হাতে নিয়ে একটা ভালো  সিনেমা দেখা আমাদের ছুটির এক অন্যতম বিনোদন। বাইরে ঠাণ্ডা সঙ্গে বৃষ্টি – এমনি পরিবেশে ঘরের উষ্ণতার মধ্যে গরম কফির সঙ্গে রোমাঞ্চকর সিনেমা বেশ একটা আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

The Odessa File (1974)

এবারের সিনেমা ‘The Odessa File’। এক তরুন জার্মান রিপোর্টার Peter Miller এর হাতে এক হলকস্ট সাভাইভারের মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা এক ডাইরি আসে। সেই ডাইরিতে রিগা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের এস এস অফিসার Roschmann এর অত্যাচারের কথা লেখা ও কিভাবে যুদ্ধের শেষের দিকে Roschmann গায়েব হয়ে যায়। ডাইরি পড়ে Miller ঘটনার সত্য সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। জানা যায়, যুদ্ধ  অপরাধী, হাজার হাজার প্রাক্তন এস এস অফিসারদের এক গুপ্ত সংঘ Odessaর কথা। এই Odessa গুপ্ত সঙ্ঘটি যুদ্ধের শেষের দিকে প্রচুর নাজি অফিসারদের নাম, পাসপোর্ট পরিচয় সব বদলে জার্মানির বাইরে নানান দেশের পুলিশ, স্থানীয় সরকার, ব্যাবসা ইত্যাদি নানান বড় বড় পদে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয় নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে। Miller এর সত্য অনুসন্ধানের পথে আরও অনেক তথ্য বেড়িয়ে আসে, কিভাবে গুপ্ত সংঘটির জাল মাকড়সার জালের মত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে ও কি ভাবে হাজার হাজার যুদ্ধ অপরাধীরা পৃথিবীর নানান দেশের মূল স্রোতে মিশে আছে, ওয়ার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট যাদের টিকির ছোঁয়া পায় নি।        

এস এস অফিসারদের এই নাম-পরিচয় বদল, নতুন চাকরি ও সম্মান দেওয়ার  জন্যে প্রচুর অর্থের যোগান আসে সুইস ব্যাঙ্কের ভোল্ট থেকে। শান্তির ও নিরপেক্ষতার চিটচিটে মুখোশ পরা সুইজারল্যান্ডের ব্যঙ্কের গুপ্ত নীতি নাজিদের খুবই প্রিয় ছিল। সুইসরা বহু আগে থেকেই দুর্বল, দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বেসামাল দেশের টাকা সোনা ইত্যাদি মূল্যবান নিজেদের ব্যঙ্কে গচ্ছিত রেখে এসেছে। এমনকি অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের টাকা নিজেদের কাছে রাখার জন্যে ১৯৩৪ এ সুইস ব্যাঙ্কের গুপ্ত নীতি আরও বেশী জোরদার করা হয়। যুদ্ধের সময় নাজি অফিসার Himmler জার্মানি থেকে সোনা, হিরে, সোনার গহনা, টাকা ভর্তি এক ট্রেন সুজারল্যান্ডের উদ্দ্যেশ্যে সুইস ভল্টে রাখার জন্যে পাঠিয়েছিল।

নাজি অফিসাররা নাজি জার্মানির সমস্ত সোনা, সমস্ত সম্পদ, জার্মানির জিউসদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া সোনা দানা, জিউসরা সোনা দিয়ে দাঁত বাঁধাত – কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে জিউদসের গণ মৃতদেহ থেকে পাওয়া সোনা, ইউরোপের নাজি অধিকৃত জায়গার ব্যাঙ্কের সোনা, টাকা সমস্ত লুট করে সুইস একাউন্টে রেখেছিল, যা কিনা আজও সুইস ব্যাঙ্কে আছে। এমনকি হিটলারের লেখা বই Mein Kampf এর রয়ালিটিও সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ছিল।

এমনকি বড়লোক প্রচুর জিউসরা যুদ্ধের আগে ও যুদ্ধের সময় সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রেখেছিল, পরে অনেক জিউস তো মারাই যায়, তাঁদের টাকা সুইস ব্যাঙ্কেরই হয়ে যায় ও জিউসরা যারা হলকস্ট থেকে বেঁচে ফিরেছিল তাঁরা সুইস ব্যাঙ্কের গচ্ছিত তাঁদেরই টাকা ফিরে পায় নি। এমনকি হলকস্ট থেকে বেঁচে আসার পর জিউসদের প্রতি সুইসরা কোন দয়া তো দেখায় নি, আবার ওদের নিজেদের গচ্ছিত টাকা দিতেও অস্বীকার করে। এমনকি, যুদ্ধের সময় সুইজারল্যান্ডে জিউস জার্মানরা অনাহূত ছিল। সুইস রাজধানী বার্ন, জার্মান রাজধানী বার্লিনকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিল যে জিউসদের পাসপোর্টে ‘জে’ অক্ষরটি লিখে জিউস বলে চিহ্নিত করতে যাতে সুইস বর্ডারেই ওদের আটকে দেওয়া হয়। যুদ্ধের শেষের দিকে অন্যান্য নিরপেক্ষ দেশরা মানবতার খাতিরে জার্মানির নিজস্ব সোনা কিনতে যখন চায় নি সুইজারল্যান্ড সেই দালালির কাজ করে গেছে বিনা দ্বিধায়। সুইস ব্যাংকরা জানে শান্তির বানীর আড়ালেই পৃথিবীর নানান দেশের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যায়, নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়া যায়।

যাইহোক, Miller সমস্ত সূত্র ধরে ধরে Odessa গুপ্ত সঙ্ঘে অনুপ্রবেশ করে ও প্রাক্তন এস এস অফিসার Roschmann কে খুঁজে পায়, যে কিনা সম্পূর্ণ নতুন পরিচয়ে পরিচিত ছিল ও  মূল Odessa ফাইলটিও পেয়ে যায়।

অনেকটা সত্য ঘেঁষা এই সিনেমাটি টান টান উত্তেজনায় ভরা।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Movie time -:) and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s