গোলাপি শহরে বেগুনি ফুলের উৎসবে (Fête de la violette, Toulouse, France)

ফেব্রুয়ারির প্রথম উইক এন্ডে শীতের রোদের নরম আলোর সকালে গোলাপি এই শহরের কেন্দ্র- ‘ক্যাপিটল চত্তর’ বেগুনি ফুলের সাজে সেজে ওঠে। পৃথিবীর অন্যান্য শহর ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রভাবে যখন লাল গোলাপে সাজে, দক্ষিণ ফ্রান্সের এই শহরটির অলিগলি কিন্তু এক ছোট্ট সুগন্ধি ফুল ‘ভায়োলেট’ কে মর্যাদা দিয়ে বেগুনি হয়ে সাজে, তাই ফেব্রুয়ারি এখানে ‘বেগুনি মাস’। তুলুসের প্রতিটি ফুলের দোকানে দেখি এই ছোট্ট ফুলের বাহার।

মধ্য যুগ থেকেই তুলুসের ইতিহাসের সঙ্গে নাকি ছোট্ট বেগুনি সুগন্ধি এই ফুলের বহু প্রাচীন সম্পর্ক, অনেকদিন ধরেই তুলুসের চাষিরা এই ফুলের চাষ করছে। ফ্রান্সের শীতে যখন সমস্ত ফুল শুকিয়ে যায়, এই ফুল, তখন বাগান আলো করে। এই ফুল ঠাণ্ডা ভালোবাসে কিন্তু অতিরিক্ত ঠাণ্ডা নয়, তুলুসের আবহাওয়া এই ফুলের খুবই প্রিয়।

ছোট্ট এই ফুলের এক নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, তাই তুলুসবাসিরা আদর করে এই অঞ্চলের এই ফুলকে ‘la violette de Toulouse’ বলে ডাকে। ইউরোপের ফুলের বাজারে অন্যান্য অনেক নামী দামী ফুলের ভিড়ে এই ফুল হারিয়েই যেতে বসেছিল, কিন্তু ১৯৮৫ তে এক হরটিকালচার ইঞ্জিনিয়ার Adrien Roucolle  ছোট্ট বেগুনি এই ফুলকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে এবং সফলও হয়েছে। আজ তুলুসের নানা জায়গায় এই ফুল দেখা যায়।

এই দুই দিনের বেগুনি ফুলের এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ছোট্ট এই বেগুনি ফুল সম্বন্ধে জন চেতনা জাগ্রত করা। কি ভাবে এই ফুল বাঁচিয়ে রাখা যায়, কি ভাবে এই ফুলের যত্ন নিতে হয়, বংশ বৃদ্ধি করতে হয় সবই জন সাধারণকে জানিয়ে দেওয়া এই উৎসবের উদ্দেশ্য। এখানে নানান ধরণের দোকান শুধুই বেগুনি ফুল ও তার থেকে তৈরি নানান জিনিসে সাজানো। এখানে আসা মানেই ঘুরে ঘুরে ফুল দেখা, বেগুনি ফুলের চারা নেওয়া, এই ফুল থেকে তৈরি নানান ধরণের চকোলেট, কেক ইত্যাদি চেখে দেখা নিয়ম। মিষ্টি হেসে ফ্রেঞ্চ মহিলারা এগিয়ে দেন কোন এক চারাগাছ বা চকোলেট।

শীতে এই ফুল তুলসের নানা অঞ্চলে চাষ হয়। শুকনো এই ফুল দিয়ে চকোলেট, ললিপপ, সাবান, পারফিউম, জ্যাম, জেলি, ভায়োলেট ওয়াইন, মোমবাতি – কি না তৈরি হয়, এমনকি তুলুস থেকে সমস্ত ইউরোপেও এই ফুল চালান যায়।

ক্যাপিতলের এই বিশাল চত্তরকে বছরের নানা সময়ে যে কতরকম উৎসবের সাজে সাজানো হয়, এই জায়গা যেন এই শহরের হৃদপিণ্ড। এই চত্তর ঘিরে প্রচুর রেস্টুরেন্টে শীতের সকালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে কফির কাপে চুমুক দেওয়াও যেন এই উৎসবের এক বিশেষ অঙ্গ। এই জায়গার বিশেষ ছন্দটিকে ধরতে হলে উৎসবের স্রোতে গা ভাসাতেই হয়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান