আহমেদাবাদ গান্ধীনগরের হাই ওয়ে থেকে আদলাজ গ্রামের দিকে যে রাস্তা গেছে সেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো কয়েকটা অটো চালককে জিজ্ঞেস করলাম Adalaj Stepwell কোনদিকে? অবাক চোখে এক বার দেখে নিয়ে বয়স্ক গুজরাটি অটো চালকের নির্লিপ্ত উত্তর – না ঐ নাম জীবনে শুনি নি। উৎসাহী অল্প বয়সী এক অটো চালক একটু বিবরণ শুনতে চাইলে বললাম – ধাপে ধাপে তৈরি কুয়ো, বহুকাল আগের তৈরি।
ও আচ্ছা, Vav? চিনি তো, চলো দেখিয়ে দিচ্ছি।
গ্রামের মাঝের রাস্তা দিয়ে এক খোলা মাঠের সামনে এসে বলল – ঐ তো। দুপুর রোদে জনহীন প্রান্তরে এসে একটু বিষণ্ণ হয়ে গেলাম, এ কোথায় এলাম? ঠিক এসেছি তো?
এসেছি যখন, দেখি কি আছে শেষে। এক লোহার গেট দিয়ে মাঠ পেড়িয়ে কয়েক সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই যেন এক চমক অপেক্ষা করেছিল।
পাথরের ধাপ কেটে কেটে তৈরি এই Stepwell যেন অলংকারের সুক্ষ কারুকাজ। প্রতিটি থামে থামে অপূর্ব সুক্ষ পাথরের কাজ, এক এক সুক্ষ কারুকাজ যেন সেতারের এক একটি ঝংকার, এক একটি শিল্প, এক একটি ছন্দ বদ্ধ কবিতা। রাজপুত রাজবংশের রাজা Rana Veer Singh ১৪৯৮ সালে এই অপূর্ব কুয়ো তৈরির কাজ শুরু করেন, পরে রানা বীর সিং কে মুসলিম সুলতান Mahmud Begada যুদ্ধে পরাজিত করে এবং ১৪৯৯ সালে এই কুয়ার কাজ সম্পন্ন করে। তাই এই Stepwell এর দেওয়ালের ইন্দো ইসলামিক সুক্ষ কারুকাজ দেখা যায়। এই Stepwell নিয়ে নানান লোক কথা, নানান কিংবদন্তী আজও এই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে ঘোরে।
সেই সময়ে বর্ষার বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্যে তৈরি এই Stepwell , যা কিনা আজও জলে ভরা, এমনকি আজও গুজরাটের দুরন্ত গরমেও এই কুয়ার জল শুকোয় না। ভেবে অবাক হই, সেই সময় কি ভাবে এই ধরণের স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল, যা এই যুগের সমস্ত দূষণ, অবহেলা, অযত্ন সহ্য করেও মজবুত!
পাঁচতলা বিল্ডিং সমান গভীর এই Stepwell, অথচ ধাপে ধাপে নামতে নামতে কখনো আলো হাওয়ার অভাব অনুভব হয় নি। প্রতিটি ধাপে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাসের আনাগোনা, আর অদ্ভুত এক ঠাণ্ডা ভাব।
এই Stepwell এর সুক্ষ কারুকাজ দেখে স্পেনের গ্রানাডার মুরিশ সাম্রাজ্যের আলহাম্ব্রার কারুকার্যের কথা মনে পড়ে যায়, এই জায়গার কারুকাজ কোন অংশে ইউরোপিয়ান মুরিশ কারুকাজ থেকে কম নয়। কি যে অপার ঐশ্বর্য হেলায় পড়ে আছে আমাদের দেশের ধুলি ধূসরিত গ্রামের প্রান্তে।
Apurbo …….
অসংখ্য ধন্যবাদ
দারুণ ছবিগুলো।
Thank you….