October 2013, Toulouse, France
তুলুসের হৃদয় ছুঁয়ে বয়ে যায় গাড়ন নদী, রবিবারের উজ্জ্বল দুপুরে বহু তুলুসিয়ান গারনের তীরে রোদ্র স্নান করে। গারনের ধারের বাঁধানো রাস্তা দিয়ে রবিবার দুপুরের হাঁটা কখন যে চেতনা জাগ্রত করে জ্ঞানের প্রসার ঘটায় বুঝতেই পারি না, আমাদের চলা থামে গারনের ধারে EDF Bazacle Centre এর সামনে।
গারন নদীর জল এখানে এক ধাপে নেমে গেছে ক্যানাল দুমিদির গেটের দিকে। গারন নদীতে এখানে এক বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তাই দীর্ঘ এক কৃত্রিম ঝর্ণা – The Bazacle এর সৃষ্টি হয়েছে । দেখি EDF Bazacle Centre এর ভেতরে বিগত দিনের ইলেকট্রিক দুনিয়ার প্রদর্শনী চলছে (১ অক্টোবর ১০১৩ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৪)।
১২ শতাব্দীতে এই জায়গায় গারনের স্রোতে ভাসমান মিল ছিল। তারই পুরনো অনেক অংশের প্রদর্শনী চলছে। এই তুলুস শহরকে আধুনিক করে সাজিয়ে তোলার জন্যে ১৯ শতকের শেষের দিকে Bazacle মিলকে এক জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়। এই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যে গারনের জলের মাছেদের যাতায়াত ও বংশবিস্তারে যাতে কোন ছেদ না পড়ে। আমাদের দুনিয়ার পাশাপাশি যে জলের ভেতরে আরেক দুনিয়া আছে আমরা তা ভুলেই যাই। গারন নদীর মাছেদের ও জলের প্রাণীদের বিচিত্র জীবন যাত্রার ছোট্ট প্রদর্শনী চলছে।
আটলান্টিকের নানান রকমের মাছের যাতায়াতের রাস্তা এই গারন নদীর উপরে এই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গত একশো বছর ধরে তিন হাজার কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হয়ে এসেছে। EDF এখানের জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক ভারসাম্য তৈরির জন্যে সমানে কাজ করে চলেছে, জন সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার নানান প্রক্রিয়ার মধ্যে এই প্রদর্শনী অন্যতম।
অক্টোবরের হালকা শীতে গারন নদীর ধারে Pont-Saint-Pierre র উপরে অনেকেই হাঁটছে ছুটির ছন্দে, এখান থেকে নদীর ওপারের সুন্দর দৃশ্যে মুগ্ধ হয়ে ক্যামেরায় চোখ রাখতেই হয়। এক সুন্দর ছবি তৈরি হয়েছে – তুলুসে আসার পর থেকে এই সৌন্দর্যে ডুবে আছি। এখানে ঘুরতে ঘুরতে মনে হয়, পৃথিবীটা শুধু যে মানুষের বাসস্থান নয়, শুধুই নিজেদের কথাই ভাবা নয়, অন্যান্য প্রাণীদেরও অধিকার এই পৃথিবীর জল হাওয়ায়, এবং মানুষের উচিত নিজের সেই পৃথিবীর জল হাওয়া বিশুদ্ধ রাখা ও তাদের কথা ভাবা – সেই কথা বোঝানোর জন্যই যেন এই প্রদর্শনী।