May 2013, Toulouse, France
প্রতি বছর ১৮ মে তে সন্ধ্যে থেকে মাঝ রাত – মানে রাত ১টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্যে ইউরোপের সমস্ত মিউজিয়াম বিনামূল্যে খুলে দেওয়া হয় । ২০০৫ সালে প্যারিসে মিউজিয়ামের প্রতি অল্পবয়সীদের আকর্ষিত করার জন্যে প্রথম শুরু হয়েছিল এই মিউজিয়াম নাইট। জনসাধারণের মধ্যে এই রাতের মিউজিয়াম দেখার অভিজ্ঞতা অভূতপূর্ব সারা ফেলে দেয়। তারপর রাতের মিউজিয়াম দেখার উৎসব সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
তুলুসেও এই দিনে সন্ধ্যা থেকে সমস্ত মিউজিয়ামের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু যে মিউজিয়াম খুলে দেওয়া হয় তা নয়, মিউজিক কনসার্ট প্রোগ্রাম, পৃথিবী উৎপত্তির গল্প বলার আসর, নাচের আসর, সিনেমা, প্রদর্শনী, বাচ্চাদের জন্যে নানান রকমের শিক্ষা মুলক এক্টিভিটি, সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়।
মে মাসে দিনে যদিও হালকা গরম রাতের দিকে ভালোই ঠাণ্ডা, ভাবলাম এই রাতে কেই বা মিউজিয়াম দেখতে যাবে। রাতের খাওয়া দাওয়ার শেষে দশটার দিকে Jardin des Plantes পার্কের পাশে Natural History Museum of Toulouse এ পৌঁছে গেলাম। দেখি, এই রাতেও প্রচুর ভিড় – বিশাল লাইন, অনেকেই সারা পরিবার নিয়ে এসেছে। সর্পিল লাইন মিউজিয়ামের দরজা থেকে শুরু হয়ে পার্কের দিকে চলে গেছে। একদল মিউজিয়াম দেখে বেরোলে তবেই আরেক দল ঢুকতে পারবে। রীতিমত উৎসব লেগেছে। রাতে তুলুসের এই দিকটা বেশ নির্জন হয়ে যায়। কিন্তু, এই সময় প্রচুর গাড়ি, মানুষে জায়গাটা জমজমাট হয়েছে।
এই মিউজিয়ামের ঠিক বাইরেই আছে নিজস্ব বোটানিক্যাল গার্ডেন। নানান প্রজাতির গাছে সাজানো এই বাগানও আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে।
Museum de Toulouse এর বয়স যদিও ১৫০ বছর, বহুদিন ধরে বন্ধ ছিল। কিন্তু নতুন রূপে, নতুন সাজে এই মিউজিয়াম তুলুসের মানুষের জন্যে ২০০৮ এ খুলে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর সৃষ্টির ইতিহাসের উপাদানে সাজানো মিউজিয়াম, রাতের আঁধারে বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। বাচ্চারা তো অবাক চোখে দেখছে পৃথিবীর আদিম অধিবাসীর সাজানো দেহাবশেষ।
মিউজিয়ামকে বাচ্চাদের শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এই প্রয়াস সত্যি ভালো। আজকের দিনের ইন্টারনেটের দ্বিমাত্রিক অসীম জ্ঞানের দুনিয়ায় বাচ্চাদের সহজ সরল জানার আগ্রহকে ত্রিমাত্রিক রূপ মিউজিয়ামই দিতে পারে বলে মনে হয়।