তুলুস ইউনিভার্সিটির দিন – ১ ( UPS, Toulouse, France)

October 2013, Toulouse, France

ইউনিভার্সিটির সবুজ মাঠে ঘাস কাটা চলছে, নির্জন দুপুরের নির্জনতা ভেঙ্গে দিয়ে ঘাস কাটার মেশিনের ঘর ঘর শব্দ ভেসে আসছে। ঘাস কাটার এক সবুজ গন্ধ ভাসছে বাতাসে। ঘাস কাটার সৌরভ যে এত মিষ্টি তা আগে জানতাম না, কেমন যেন এক সতেজ বুনো গন্ধ। ঘাসকাটার কিছু পরেও এই গন্ধ ভাসবে ইউনিভার্সিটির সারা মাঠে।

শীতের নরম রোদ এসে পরছে আমার অফিসের ডেস্কে, রোদের রং হালকা হলুদ, মৃদু তাপ, জানালার গ্রিলের ছায়া একটু লম্বা, একটু তেরছা। একটু উষ্ণতার ছোয়ায় মন হয় নস্টালজিক।  সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাতাসের এই ঠাণ্ডা অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গে রোদের এই নরম উত্তাপ ভীষণ নস্টালজিক করে।

এই ইউনিভার্সিটি চত্বরে অনেক বেড়াল থাকে। এক ভদ্র মহিলা গাড়ি করে এসে বেড়ালদের শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নির্বিশেষে খাবার দেন। প্রায়ই দেখি ঐ সমস্ত সাদা কালো বেড়াল ভদ্রমহিলার গাড়ি থেকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসে খাবার দেওয়ার জায়গায়, কিংবা ভদ্রমহিলাকে ঘিরে ঘুরঘুর করে। এই শীতের দুপুরের নরম রোদে গা এলিয়ে দিয়ে ওদের নিশ্চিন্তির ঘুমে বাধা পড়ে ঐ ঘাসকাটার মেশিনের শব্দে।

কিছুদিন আগেই ঢালু জমিতে হলুদ সাদা বেগুনি লাল ফুল ফুটেছিল, গরমের ছুটির সময়ে সবুজ মাঠ ছিল হলুদ বেগুনি নক্সা কাটা কার্পেটের মতো। ছাত্ররা সবাই ফিরে আসবে গরমের ছুটির শেষে তারই তোড়জোড় চলছে।

তুলুস ইউনিভার্সিটি ইউরোপের বহু পুরনো ইউনিভার্সিটির মধ্যে অন্যতম। ১২২৯ সালে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয় কেম্ব্রিজের সমসাময়িক। এই ইউনিভার্সিটিতে ফ্রান্সের বহু ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, প্রোফেসর তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে যেমন space science, earth science, computer science,  Aeronautics  ইত্যাদি নানা বিষয়ে পড়ানো হয়, তেমনি সমস্ত বিষয়ে গবেষণাও হয়। উইকিপিডিয়া অনুসারে ইউরোপের অন্যতম পুরনো ইউনিভার্সিটির লিস্টে এই ইউনিভার্সিটি সপ্তম স্থানে আসা উচিত। কিন্তু, নেই। কারণ মনে হয়, এই ইউনিভার্সিটির পুরনো অংশ সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। সমস্ত ক্লাস নতুন বিল্ডিঙেই হয়।

যাইহোক, ১৯১২ সালে রসায়নে নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী Paul Sabatier  এর নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নামকরণ হয় – UPS বা Université Paul Sabatier।  পুরনো ভিতের উপরে নতুন ভাবে ইউনিভার্সিটি বিল্ডিং গড়ে ওঠে।

ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোণার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলারও বন্দোবস্ত আছে সে তো জানা কথা। গবেষণার সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট – বাসের রাস্তা চলে গেছে। মেট্রো এসে থামে ইউনিভার্সিটির দোরগোড়ায়, স্টপের নাম Université Paul Sabatier। দূরের বাস এই ইউনিভার্সিটি চত্তর থেকেই নানা দিকে যায়। তুলুসকে ছাত্রদের শহর বলার কারণ, এই শহর ছাত্রদের পড়াশোনার সমস্ত সুযোগ সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে, পড়াশোনার সঙ্গে  জড়িত নানা আনুষঙ্গিককে ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে আরও সরল করেছে।

গরমের সময়ে প্রতিদিন বিকেলে শান্ত নির্জন ইউনিভার্সিটি চত্বরে হাঁটি, পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হলে bonjour বা bonsoir বলার সঙ্গে হাসিও বিনিময় হয়, ভালো লাগে – বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবে নানা জিনিস শিখছি দিবারাত্র।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s