দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে ফেরে পঁচাত্তর বছর বয়সী মানুষটি, পরনে গেরুয়া বস্ত্র, বস্ত্রের সামনে পেছনে কিছু ফোন নম্বর লেখা। না, দুমুঠো অন্ন নয়, মলিন বস্ত্র নয়, টাকা পয়সা নয় – মানুষটি অব্যবহৃত ঔষধ চেয়ে চেয়ে ফেরে। দিল্লি বাসী মানুষটি উচ্চ স্বরে হাঁকে “যো দাওয়াইয়া আপকে কামমে নেহি আ রাহি হ্যাঁয় দান কিজিয়ে/ কৈ বেকার কে দাওয়াইয়া দান করেঙ্গে।’
ভোরের দিল্লিতে বড়লোকের বাংলোর সামনে হাঁকে মানুষটি, সকালের খবরের কাগজ পড়তে পড়তে মানুষটির হাঁক কানে যায়, মানুষের চেতনাকে একটু জাগিয়ে দেয় সেই হাঁক। একটু অন্যরকম চাহিদার কথা সবাইকেই আকর্ষণ করে।
আমাদের দেশে সবারই ঘরে প্রচুর অব্যবহৃত ঔষধ থাকে, অনেক ঔষধ তো ভালো থাকে। অনেকদিন পরে ব্যবহার না করে ফেলতে হয়, কিন্তু সেই ঔষধ যদি কোন দরিদ্র মানুষের কাজে লাগে মুক্ত হস্তে দিতে কারোর কোন আপত্তি থাকে না।
ছেলেবেলা থেকে এক পায়ে একটু চলতে অসুবিধা হয় মানুষটির, একটু খুঁড়িয়ে চলে কিন্তু এই বৃদ্ধ মানুষটি দিল্লির গরমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে হেঁকে ঔষধ সংগ্রহ করে গরীব মানুষের জন্য। সমস্ত সংগ্রহীত ঔষধ দান করে গরীব মানুষের জন্য।
সামান্য জ্বরে আক্রান্ত অসুস্থ গরীব যাদের কাছে ঔষধ কিনে খাওয়া বিলাসিতা, তাঁদের কাছে এই মানুষটি ‘মেডিসিন বাবা’। প্রতি মাসে মানুষটি পাঁচ থেকে পনেরো লক্ষ টাকার ঔষধ সংগ্রহ করে শুধু দিল্লি থেকে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগ্যানাইজেশনের সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতবর্ষের ৬৪.৯ কোটি গরীব মানুষের কাছে কোনোদিন ঔষধ পৌঁছয় নি। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ঔষধ-বঞ্চিত মানুষ এই ভারতবর্ষের।
কিন্তু এই মানুষটি, ওংকার নাথের স্বপ্ন সেই ঔষধ-বঞ্চিত মানুষদের কাছে ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার। ইচ্ছে এক মেডিসিন ব্যাঙ্ক তৈরি করার। চ্যারিটি হাসপাতালে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা তো হয় কিন্তু ঔষধ কেউই দেয় না। ওংকার নাথের কাজ ভিক্ষা করে সংগৃহীত ঔষধ সেই সব হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া।
হাসপাতালের ডাক্তার পরিক্ষা করেন ওংকার নাথের আনা ঔষধ। ঔষধ গুলোকে এনে খাতায় লেখা, হিসাব রাখা, আলাদা করা সবই করেন ওঙ্কার নাথ। অনেক ডাক্তারের ক্লিনিকে ওঙ্কার নাথের নাম লেখা আছে ঔষধ ডোনার হিসাবে।
জীবন দায়ী ঔষধে আজ কতো মানুষের প্রান বাঁচছে ওঙ্কার নাথের জন্যে, পৌঁছে যাচ্ছে দরকারি ঔষধ যেখানে পৌঁছনোর দরকার।