July 2013, Tallinn, Estonia
গরমের সময়ে হেলসিঙ্কির সঙ্গে ইস্তোনিয়ার বাল্টিক সমুদ্রের জলপথে ভালো যোগাযোগের জন্য হেলসিঙ্কি থেকে তালিনিন যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সন্ধ্যার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম ইস্টনিয়ার রাজধানী তালিনিন।
ঐতিহাসিক তালিনিন ইউরোপের অন্যতম সুন্দর শহর। ভিরু গেট (Viru gate) থেকে শুরু হয়েছে উঁচু দেওয়াল ঘেরা এই পুরনো শহর (fortified city)। ঢোকার মুখেই সারি সারি ফুলের দোকানি ফুলের পসরা সাজিয়েছে। শহরে পা রাখতেই মনে হল যেন রূপকথার জগতে চলে এসেছি বা হ্যারি পটার সিনেমার লোকেশনে চলে এসেছি। পুরনো দিনের গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম সিটি হলের চত্তরে।
রাতের অন্ধকার হতে অনেক দেরি, প্রায় রাত এগারোটা বাজে, এখানে সন্ধ্যার অন্ধকার নামছে লাজুক পায়ে। শুরু হচ্ছে এই শহরে রাতের প্রস্তুতি। রাস্তার পাশের সারি সারি রেস্তরাঁয় জ্বলে উঠছে লণ্ঠন। ঐতিহাসিক শহরের ঐতিহাসিকতা বজায় রাখতে মোমবাতির লণ্ঠন জ্বালায় এরা, রাস্তার পাশে জ্বালিয়ে দিয়েছে মশাল।
আলো আঁধারে এখানের পরিবেশটা যেন অনেক যুগ পিছিয়ে গেছে, যেন আরো বেশী ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে। রাস্তায়, পুরোন দিনের পোশাক পড়ে মেয়েরা রোস্টেড কাঠবাদাম (Almond) বিক্রি করেছে।
ছেলেরাও পুরনো দিনের পোশাক পড়ে আগুনের খেলা দেখাচ্ছে। বাইরের রেস্টুরেন্ট গুলোতে মেয়েরা ট্রাডিশানাল পোশাক পরে খাবার পরিবেশন করছে।
কবল্ (cobblestone) পাথরে বাঁধানো রাস্তা ধরে মধ্যযুগের এই পুরোন শহরে, পুরোন বিল্ডিঙের মধ্যে, সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে যেন পিছিয়ে গিয়েছি বহু যুগ। এই শহর UNESCO World Heritage Site।
ফিনল্যান্ড ও ইস্তনিয়ার একই ইতিহাস। প্রথমে সুইডিশ ও পরে রাশিয়ান শাসন এবং বর্তমানে স্বাধীন, ও ২০০৪ এ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখানের জীবন ধারণে ও সংস্কৃতিতে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের সংমিশ্রণ ঘটেছে। পুরনো তালিনিন শহরকে ঘিরে আধুনিক তালিনিন গড়ে উঠেছে।
এই শহর দুই ভাগে ভাগ হয়েছে – উচ্চ ভাগ ও নিম্ন ভাগ। উচ্চ ভাগে আছে Toompea পাহাড়, এই পাহাড় থেকেই তালিনিন শহরের উৎপত্তি। দুই ভাগেরই স্বতন্ত্র পরিবেশ।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এখানে অনেক বোমা বারুদ বর্ষণ হয়েছিল, কিন্তু ভাগ্য বশত মধ্যযুগের এই পুরোন শহরটি অক্ষত থেকে যায়, এবং এখনও খুব যত্ন সহকারে সংরক্ষিত। মনে হয় পূর্ব ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর সংরক্ষিত, জীবন্ত ঐতিহাসিক শহর তালিনিন।
পরের দিন খুব সকালেই সিঁড়ি ভেঙ্গে Toompea পাহাড় চলে গেলাম। পাহাড়ের উপরেই সামনে বিশাল সাদা সুন্দর রাশিয়ান গোঁড়া ক্যাথিড্রাল Alexander Nevsky Cathedral, ইস্টোনিয়ান মানুষের অপছন্দের এই ক্যাথিড্রাল এখনও রাশিয়ান শাসনের চিহ্ন বয়ে চলেছে।
Toompea পাহাড়েই এই শহরের বিস্তার। নানান গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে আবিষ্কার করি এই শহরের ইতিহাস। দেখি এই শহরের মানুষের প্রতিদিনের জীবন যাপনের ছবি।
এই সময় এখানে তালিনিন লিলি ফেস্টিভ্যাল চলে। মধ্য যুগের শহরের দেওয়ালের পাশে Tower’s Square এ এক ছবির মত বাগানে এই ফুলের ফেস্টিভ্যাল হয়। ম্যাপ দেখে খুঁজে পৌঁছে গেলাম।
ভীরু গেট দিয়ে ঢুকে পুরো শহরে হেঁটে একদম অন্য দিক দিয়ে বেড়িয়ে এলাম। পুরো শহরকে ঘিরে প্রাচীর। প্রাচীর ঘেরা ঐতিহাসিক শহরটিতে সকালের আলো লুটিয়ে পড়েছে, অদ্ভূত সুন্দর লাগছে। এক ভালো লাগা রেশ নিয়ে ফিরে এলাম বন্দরে, হেলসিঙ্কির উদ্দ্যেশ্যে জাহাজ ছাড়বে এখুনি।