রোম মানেই সময়ের ইতিহাসের হাত ধরে পথ চলা – রোমের প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি স্থাপত্য যেন হাজার বছরের লক্ষ গল্প বলার জন্যে মুখিয়ে থাকে। রোমের প্রতিটি পাথর যেন মানব সভ্যতার স্তরবিন্যাস ও তার পালাবদলের গল্প বলে, বলে সময় বদলের গল্প, রাজা ও তার সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের গল্প।
ভ্যাটিক্যান ছাড়িয়ে, টাইবার নদীর তীর ঘেঁসে যে রাস্তাটি রোমের সিটি সেন্টারের দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলে, যে স্থাপত্যটিকে দেখা যায় নাম তার – Castel Sant’Angelo । কিংবা Mausoleum of Hadrian ও বলা যায়। রোমান সম্রাট Hadrian নিজের ও তার পরিবারের জন্যে সমাধি তৈরি করার জন্যে এই সিলিন্ডারের মতো দেখতে দুর্গ আকারের স্থাপত্য তৈরি করেছিলেন।
প্রথম যখন এই স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল, এই স্থাপত্য ছিল রোমান সাম্রাজ্যের শক্তির প্রতীক। বহু রোমান সম্রাটদের জীবনের শেষ ঠিকানা ছিল এই স্থাপত্য। স্থাপত্যের গায়ে সাজানো ছিল নানান ভাস্কর্য, রঙিন টাইলস।
তারপর, রোমান সম্রাটদের এই বিশাল সমাধি স্থাপত্য পরবর্তী কালে, সম্পূর্ণ অন্য কারণে ব্যবহার হয়েছিল। ভ্যাটিক্যানের পোপের সুরক্ষার জন্যে দুর্গ ও ক্যাসল হিসাবে ব্যবহার হয়েছিল।
গত কয়েক শতাব্দী ধরে এই স্থাপত্যের নানা ধরণের বদল ঘটেছে। বিশেষ করে এই দুর্গ যতটা সমাধি তার চেয়েও বেশী পোপের সুরক্ষা দুর্গ হিসাবে ব্যবহার হয়েছে।
অবশ্য, বর্তমানে এই স্থাপত্য এক মিউজিয়াম হিসাবে ব্যবহার হয়। রেনেসাঁস অন্দর সজ্জায় সাজানো এই মিউজিয়ামের সংগ্রহে প্রচুর ছবি, ভাস্কর্য থেকে শুরু করে মধ্যযুগীয় অস্ত্র শস্ত্র দেখা যায়, যে অস্ত্র শস্ত্র গুলোর মধ্যে অনেক অস্ত্র এই দুর্গ ক্যাসলকে রক্ষার জন্যে মধ্য যুগে সৈন্যরা ব্যবহার করেছিল।
চোদ্দ শতাব্দীতে ভ্যাটিকান ও এই স্থাপত্যের মধ্যে সংযোগকারি এক গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছিল। আপৎকালে, ভ্যাটিকানের পোপের সুরক্ষার জন্যে এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার হতো। শত্রু আক্রমন করলে, ভ্যাটিকান থেকে সেই সুড়ঙ্গ ধরে এই দুর্গে এসে পোপ আত্ম রক্ষা করতে পারতো।
আসলে, রোম শহরটার মধ্যে মাটির উপরে যত না ঐতিহাসিক রহস্য ছড়িয়ে আছে, ঠিক তেমনি মাটির নিচেও লুকিয়ে আছে অনেক গোপন রহস্য, টানেল, সুড়ঙ্গ, গল্প। যা কিনা আজও মানুষের কল্পনাকে ইন্ধন যোগায়।