তাজ ভ্রমণের রূপকথা -২ (The Taj Mahal, Agra, India)

মুমতাজকে হারানোর পরে, শাহ্‌জাহানের দুঃখকে, রূপ দিতে রাজস্থানের মাকরান থেকে এসেছিল শ্বেত পাথর – মার্বেল, লাল পাথর এসেছিল ফতেপুর সিক্রি থেকে, রাশিয়া থেকে এসেছিল ম্যালাসাইট, চিন থেকে জেড পাথর, বার্মা থেকে অ্যাম্বার, শ্রীলঙ্কা থেকে রুবি ও আফগানিস্থান থেকে এসেছিল লাপিস লাজুলি, তারপর পৃথিবীর আরও অন্য নানা জায়গা থেকে এসেছিল আরও অন্যান্য দামী পাথর, মণি মাণিক্য।

তুর্কি থেকে এসেছিল স্থাপত্য শিল্পী, আর ভারতবর্ষের নানা দিক থেকে এসেছিল শ্রমিক, দক্ষ শ্রমিক যারা পাথর কেটে কেটে পাথরের গায়ে ফুটিয়ে তোলে স্বপ্নের সুক্ষ রূপ, ছবি।

তারা দিয়েছিল তাদের দিন রাতের শ্রম, সময়, স্বেতবিন্দু – আর তারপর তাদের দীর্ঘ বাইশ বছরের সময় ও শ্রমের শেষে, পৃথিবীর বুকে  জন্ম হয়েছিল আশ্চর্য এই স্মৃতি সৌধ, সমাধি ক্ষেত্র – এই তাজমহল।

তারপর শোণা যায়, ঐ কারিগর যারা পাথর কেটে ঐ স্থাপত্যকে রূপ দিয়েছিল – তাদের সবার আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছিল – ওরা যেন পৃথিবীর বুকে আর দ্বিতীয় তাজ না বানাতে পারে।

পৃথিবীর বুকে আরও তো অন্য কত স্থাপত্য দেখা যায়, কিন্তু, শ্রমিকদের আঙুল কেটে নেওয়ার গল্প তো শোণা যায় না! তবে কেন হাজার হাজার শ্রমিক যারা, তাদের শ্রম, শ্বেত বিন্দু, ধৈর্য, বুদ্ধি, দিয়ে তৈরি করেছিল তাজ – তার গায়ে এতো বদনাম! কেন তাজকে ঘিরে এতো বিতর্ক?

তবে ইতিহাস কোন গল্প কথা দিয়ে রচিত হয় না, ইতিহাস তথ্য নির্ভর সত্যের উপরেই লেখা হয়।

তাই, সত্যিই শ্রমিকদের আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছিল কিনা সেই লোককথার বিচার ইতিহাস করে না। তবে, অনেক ইতিহাসবিদ মনে করে – তাজের দেওয়ালের কারুকাজ গুলো ফুটিয়ে তুলতে এবং পালিশ করতে যে পরিমান অমানুষিক শারীরিক শ্রমের প্রয়োজন হয়েছিল – তাতে অনেক শ্রমিক হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়তো। তাই, মুখে মুখে ঐ কাল্পনিক গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল।

আর, এই মহান ও আশ্চর্য স্থাপত্য তৈরি করতে যে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের জীবনের বহু সময় দিয়েছিল তা এই স্থাপত্যের সূক্ষ্মতা দেখে প্রমান হয়ই।

হয়তো, একদিকে রাজার স্ত্রী হারানোর দুঃখ, কষ্ট, আরেকদিকে হাজার শ্রমিকের আঙুল হারানোর কষ্ট, যন্ত্রণা – সব দিয়ে এক কষ্ট, দুঃখ, নিষ্ঠুরতা, রাজনৈতিক শক্তি দানা বেঁধে তৈরি হয়েছিল তাজ।

তারপর, তো সময়ের চাকা ঘুরেছে, ইতিহাসের পাতা পালটে গেছে, আজ মানুষের সেই কষ্টের কথা আর কেউই মনে রাখে না, মনে রাখে তাদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কথা। কোন শিল্পী পাথরের বুকে ফুটিয়ে তুলেছিল অদ্ভুত কারুকাজ তা কেউই জানে না, কিন্তু সেই অনামি মানুষদের হাতের কাজ আজও পৃথিবীর বুকে এক অপূর্ব সৃষ্টি হয়ে রয়ে গেছে। তাজের গায়ে তারাও অমর হয়ে রয়ে যায়।

তাই, হয়তো কবি বলেছেন – সময়ের গালে এক বিন্দু অশ্রুর নাম তাজ।

আর সেই অশ্রু যখন দানা বেঁধে মুক্তোর মতো সাদা হয়ে যায়, জমাট বেঁধে এক শিল্পে রূপান্তরিত হয় – তাকে দেখতে পৃথিবীর নানা কোন থেকে লক্ষ মানুষ তাজের আঙ্গিনায় আসে। তাই, আজ মনে হয়, তাজ আর অশ্রু বিন্দুর জমাট বাঁধা কঠিন রূপ নয় – এই তাজ আজ বহু মানুষের জীবন ধারণ, জীবিকা, মানুষের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, India, Travel, Uncategorized, Uttar Pradesh and tagged , , , . Bookmark the permalink.

1 Response to তাজ ভ্রমণের রূপকথা -২ (The Taj Mahal, Agra, India)

  1. অজানা's avatar অজ্ঞাত বলেছেন:

    refreshed all old memories.

অজ্ঞাত এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল