ইউরোপ পথের রিক্সা (Rickshaw in Europe’s City)

পড়নে দামী ব্র্যান্ডের জিন্স, টি শার্ট, মাথায় টুপি ও একমুখ হাসি পড়ে নিয়ে, মালাগা ক্যাথিড্রালের সামনে দাঁড়ানো ছেলেটি আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছিল, বলেছিল – একটু রিক্সা রাইড নিন না, মালাগার সব দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবো।

মুখের হাসি সব দেশেই সংক্রামক, তাই হেসেই উত্তর দিয়েছিলাম – ও অনেক চড়েছি, এখানে আর চড়তে চাই না।

সেদিন, শুধু কি হেসেই উত্তর দিয়েছিলাম! আশ্চর্যও অনেক হয়েছিলাম – ইউরোপের রাস্তায় রিক্সা? আমাদের দেশের শহর গুলো, যেখানে রিক্সা উঠিয়ে দিয়ে আধুনিকীকরণের জন্যে মরীয়া, সেখানে ইউরোপের পথে এরা রিক্সা চালাতে শুরু করেছে?

মালাগা শহরেই প্রথম আমারা রিক্সা চলতে দেখেছিলাম। দেখেছিলাম – কি ভাবে একটু বয়স্ক মানুষরা দিব্যি রিক্সা চড়ে ঐতিহাসিক শহরের নানা গলির দর্শনীয় জায়গা গুলো দেখে নিচ্ছে। তারপর তো ইউরোপের নানা শহরে নানা ধরণের রিক্সার দেখা পেয়েছিলাম।

জার্মানির অনেক শহরে তো বহু আগে থেকেই রিক্সার চল ছিল। মিউনিখ শহরে তো শুনেছি, অনেক ছাত্র ছাত্রীরা ছুটির দিনে রিক্সা চালায়। রিক্সা নিয়ে টুরিস্টদেরকে হাসিমুখে ডাকাডাকি করে সওয়ারি জোগাড় করে নিয়ে, শহরের সমস্ত জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার কাজটি এরা খুবই যত্ন নিয়ে করে।

যদিও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এই রিক্সা নিয়ে একটু নাক উঁচু করে, শহরের যানজটের জন্যে রিক্সাকেই দায়ী করে – কিন্তু, ইউরোপের নানান ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রে, যেখানে গাড়ি চলাচল একদম নিষেধ, সেখানে অনেক দামী হোটেলের প্রাথমিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে সাইকেল রিক্সা। কাছের ষ্টেশন থেকে যাত্রীদের নিয়ে আসা, যাওয়ার জন্যে দামী হোটেল গুলোর নিজস্ব রিক্সার বন্দোবস্তও আছে – সঙ্গে বিজ্ঞাপনের কাজটিও হয়ে যায় – চলমান বিজ্ঞাপন।

আসলে, দেখতে গেলে, ইউরোপের নানান ঐতিহাসিক শহরের গলিতে রিক্সা অনেক বেশী কার্যকর, তাছাড়া ইউরোপের অনেক শহরের মানুষ যখন পরিবেশ দূষণ নিয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল, তখন পরিবেশদূষণহীন এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পছন্দই করতে শুরু করেছে – তাই শুধু মালাগা নয়, তারপর তো উত্তর ইউরোপের রিগা থেকে শুরু করে, প্রাগ ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে রিক্সার দেখা পেয়েছি, এমনকি প্যারিসের পথেও রিক্সার দেখা পেয়েছি – তবে ইউরোপের রিক্সা গুলো অনেকটাই অন্যরকম, চালক ও সওয়ারি দু’জনেই যাতে বৃষ্টির সময় মাথা বাঁচাতে পারে, সে ব্যবস্থাও চমৎকার, তাছাড়া পাহাড়ি পথে চালানোর জন্যে প্যাডেলে বিশেষ ধরণের ব্যবস্থাও আছে – সব মিলিয়ে টুরিস্টদের জন্যে উত্তম এক ব্যবস্থা।

আমরা যখন আমাদের দেশের রাস্তার সমস্ত রিক্সাকে চিরতরে বিদায় জানাতে উঠে পড়ে লেগেছি, ইউরোপের ঐতিহাসিক শহর গুলোতে উল্লেখযোগ্য ভাবে রিক্সার উপস্থিতি আশ্চর্য তো করেই – বিশেষ করে, যখন দেখি প্যারিসের রাস্তায় মেয়েরাও দিব্যি রিক্সা চালাচ্ছে, কিংবা প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ও ল্যুভরে মিউজিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে টুরিস্টরা রিক্সার সঙ্গে দর কষাকষি করছে। এমনকি, তুলুসের রাস্তাতেও দেখি অত্যাধুনিক রিক্সায় করে কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা  ছুটির দিনে, ফাস্ট ফুড বিক্রি করতে শুরু করেছে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s