যাইহোক, পোর্ট ওয়াইন তৈরির সময়, আঙুর রসের যে ফারমেন্টেশন পদ্ধতি শুরু হয় তাতে ব্র্যান্ডি মিলিয়ে দিয়ে মাঝপথেই থামিয়ে দেওয়া হয় – তাই এই ওয়াইনের স্বাদে আঙুর রসের মিষ্টতার অনেক অংশই রয়ে যায় – আর সেই জন্যে পোর্ট ওয়াইন বেশ মিষ্টি হয় ও অ্যালকোহলের পরিমাণও ফরাসী ওয়াইনের চেয়ে অনেক বেশী থাকে। আর এই ধরণের ওয়াইন তৈরির পদ্ধতির ফারমেন্টেশনকে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়ার জন্যে, ঠিক কবে, এবং কে ব্র্যান্ডি যোগ করেছিল কেউই জানে না – তবে পোর্ট ওয়াইন তৈরির এই বিশেষ পদ্ধতিকে fortification বলা হয়, আর পোর্ট ওয়াইন ইউরোপের প্রিয় Fortified ওয়াইনের মধ্যে অন্যতম।
তবে, শোণা যায়, আঙুরের রসে ব্র্যান্ডি যোগ করেই পোর্ট ওয়াইন আরও বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল – সতেরো শতাব্দীতে, দুরো উপত্যকার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে কাঠের পিপেতে করে, নদীপথে ইংল্যান্ডে ওয়াইন নিয়ে যাওয়া ছিল দীর্ঘ দিনের ব্যপার, আর সেই দীর্ঘ সময় ধরে ফারমেন্টেশন পদ্ধতি চলতে থাকলে, মাঝপথেই কাঠের পিপে থেকে ওয়াইন ছলকে পড়ে যেতে পারে – সেই জন্যে পর্তুগীজরা ওয়াইন রপ্তানির সুবিধার জন্যে আঙুরের রসে বিশেষ পরিমাণের ব্র্যান্ডি মিলিয়ে দিতে শুরু করেছিল।
তারপর দীর্ঘ দিনের পরীক্ষা নিরীক্ষায় পর্তুগালের সেই ওয়াইন আরও উন্নত হয়েছে। আঙুরের মরশুমে তৈরি ওয়াইন ওক কাঠের তৈরি বিশাল বিশাল পিপের মধ্যে রেখে, মাটির নীচের ঘরে, ওয়াইনের বয়স বাড়ানোর জন্যে রেখে দেওয়া হয় – যাতে ওয়াইন ভিন্টেজ হতে পারে। তারপর, বেশ কয়েক বছর পরে বোতলজাত করা হয়, ঠিক কত বছর পরে বোতলজাত করা হল – তার উপরে নির্ভর করে পোর্ট ওয়াইনের নামকরণ হয়।
পোর্ট ওয়াইনের বয়স যতই বাড়ে, পোর্ট ওয়াইনের বোতলে যতই জমে দীর্ঘ দিনের ধুলো, কখনো কখনো চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বা আরও অনেক বেশী হতে পারে, ততোই নাকি বাড়ে দাম, ওয়াইনের দামের চেয়েও বাড়ে ঐতিহাসিকতার দাম, সময়ের দাম, আর ততোই বাড়ে স্বাদ, গন্ধ, রং – আর বিশেষজ্ঞের মতে, পোর্ট ওয়াইনের সব কিছু ঠিক থাকলে, যে বছরে পোর্ট ওয়াইনকে কাঠের ব্যারেলে রাখা হয়েছিল – পোর্ট ওয়াইন তৈরির সেই বছরকে ও পোর্ট ওয়াইনকে ভিন্টেজ ঘোষণা করা হয়।
তাই, এক গ্লাস পোর্ত ওয়াইনে শুধু আঙুরের রসই থাকে না, থাকে সময়ের এক টুকরো ইতিহাস, একটা জায়গার গল্প, মানুষের বাঁচার গল্প, সুখ দুঃখের গল্প আরও কতো কি। আর সব গল্পরা মিলে যখন তৈরি হয় পোর্ট ওয়াইন, সে আরও বিখ্যাত হয়ে পড়ে।