প্রতিদিনের পথ ( The daily route)

তুলুসের অ্যাভিনিউ তোলোসান খুব যে নামকরা বা বিখ্যাত এক রাস্তার নাম তা নয়। তবে আমাদের তুলুস বসবাসের ইতিকথার সঙ্গে, ঐ পথের নামটি যে অতোপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে।

সে তো মানুষ যেখানে থাকে, তার বসবাস, তার জীবন যাপনের সঙ্গে একটি পথের নাম জড়িয়েই যায়, আমাদেরও গেছে। প্রতিটি পথের এক নিজস্ব চরিত্র আছে, এক নিজস্ব ভঙ্গি আছে, ছন্দ আছে – আর সেই ছন্দের সঙ্গে প্রতিটি মানুষও জড়িয়ে যায়।

প্রতিটি পথের এক গল্প থাকে – মানুষ সেই গল্পের চরিত্র হয়ে যায়। প্রতিটি পথের এক চেনা মুখ থাকে, ঐ চেনা মুখ গুলোর এক একটি গল্প থাকে – আমরা সেই চেনা মুখের দলে ভিরে যাই, সেই গল্পের চরিত্র হয়ে যাই। কিছুদিনের মধ্যে আমরাও সেই অ্যাভিনিউ তোলোসানের চেনা মুখ হয়ে যাই। এটাই নিয়ম।

প্রথম যেদিন ঐ পথের পাশে, এই আস্তানাটিকে দেখতে এসেছিলাম, হঠাৎ-ই অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল, আর সামনের পাহাড়ি এলাকা, সেই বৃষ্টিতে আবছা হয়ে গিয়ে যেন এক অদ্ভুত সুন্দর ক্যানভাস পেন্টিং তৈরি করেছিল – সেই দিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, এই বাড়িতেই থাকবো।

আর কাজের জায়গাটিও এই আস্তানাটির কাছেই, তাই সব শর্তই পূরণ হয়েছিল বলা যায়। তারপর তো, তুষার পাতের দিন হোক, বৃষ্টি হোক, বা আবির রাঙা সন্ধ্যা হোক, শীতের বিকেল হোক এই পথের ছবির সঙ্গে, জুড়ে গিয়েছিলাম।

আর আমাদের আস্তানা যখন ঐ পথটির একদম পাশেই হয় – সকালের ব্যস্ত পথই হোক বা মেঘলা বিকেল বা সন্ধ্যে, মধ্যরাত কিংবা ছুটির হলুদ দুপুরের নির্জন পথ আমাকে টানে। সকালে এক কাপ চা নিয়ে, চুমুক দিতে দিতে আমাদের ব্যলকনির নিচ দিয়ে যে পথটি এক বাঁক নিয়ে চলে গেছে – অ্যাভিনিউ তোলোসান, ঐ পথের টুকিটাকি ব্যস্ততা দেখতে বেশ লাগে।

প্রতিদিন সকালে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা পাউরুটির দোকানে একটা পাউরুটি কিনে, সামনের কাগজের দোকান থেকে কাগজ কিনে, আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফিরে যায়। আবার ছুটির দিনে এক ভিখারি তার কুকুর নিয়ে রাস্তার বাঁকে এসে বসে – ফরাসি বৃদ্ধারা ঐ ভিখারির কুকুরকে খানিকটা আদর করে, ভিখারিটির গিটার বাজানো শুনে নিজের জায়গায় ফিরে যায়।

একদিকে পথের ঐ শেষ, যেখানে গিয়ে পথটি ইউনিভার্সিটির দিকে মুড়ে গেছে, সেই পথ ধরে তো প্রতিদিনের আসা-যাওয়া। অন্য দিকে পথটি গিয়ে শীতের কুয়াশার সঙ্গে মিশে যায়, বাঁক নেয় – কখনো সেই উদাসীন নির্জন পথ ধরে চলতে, উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে ভালোই লাগে।

ঐ পথের সামনে, ঐ ফ্রেঞ্চ পাউরুটির দোকানে প্রতি সকালের পাউরুটির সুবাস, সামনের ফুলের দোকানের মেয়েটির ফুল সাজানো, সামনের বাড়ির বৃদ্ধার প্রতি সকালে দরজা  জানালা খুলে দেওয়া, ঝকঝকে উজ্জ্বল দিনে নিয়ম করে জানালার কাচ পরিস্কার করা দেখা, প্রতিদিন ঐ পথ ধরে ঘরে ফেরা, দূরে কোথাও যাওয়া – সব কিছুর সঙ্গে কি ভাবে যেন  ধীরে ধীরে প্রতিদিনের জীবন যাপন, বাঁচা বাড়া জড়িয়ে যায় ।

অ্যাভিনিউ তোলোসান কখন যে জীবন যাপনের এক অঙ্গ হয়ে যায়, বুঝতেও পারি না। কিংবা তারও আগে যে পথ ধরে চলেছিলাম, তারপর, যে পথ ধরে চলবো, সবই যে পথকে কেন্দ্র করেই চলা। মানুষ মনে হয় পথকে ঘিরেই, একটা পথ ধরে বাঁচতে ভালোবাসে। পথই যে মানুষকে এক ঠিকানা দেয়, পথের পাশটি দেয় আস্থানা। তাই পথ চিনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, পথ বদল করে, নতুন পথে হাঁটা, সবই যে জীবনের এক অঙ্গ, জীবনের যাত্রা।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান