মোনাকোর ক্যাসিনো (Casino de Monte Carlo, Monaco)

জুয়া বা গ্যাম্বলিং, সবটাই সম্ভাবনার খেলা – আর এই খেলায় কেউ হারে, কেউ বা জেতে। কিন্তু, সেই সম্ভাবনার খেলায় যে বিজ্ঞান থাকতে পারে তা হয়তো প্রথমেই মাথায় আসে না। কিন্তু, এই অসীম সম্ভাবনার খেলাটিকে অঙ্ক ছাড়া আর কেই বা বুঝে উঠতে পারে।

আর সেই সম্ভাবনার কঠিন খেলাটিকে বুঝে উঠতে গিয়ে – ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ঐ কয়েকজন ছাত্র ও প্রফেসর অঙ্ক কষে তাসের ব্ল্যাকজ্যাক গ্যাম্বলিং খেলা জেতার সুত্র তৈরি করেছিল।

আর ঐ ছাত্রের দল লাস ভেগাসের যে কোন ক্যাসিনোতে গিয়ে পর পর খেলায় জিতে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ফেলেছিল। তারপর তারা হানা দিয়েছিল ইউরোপের বিখ্যাত ক্যাসিনো গুলোতে। আর ইউরোপের বিখ্যাত ক্যাসিনোর মধ্যে মোনাকোর মন্টি কার্লো ক্যাসিনো বিখ্যাত। প্রতিদিন এখানে বিলিয়ন ডলারের গ্যাম্বলিং হয়। কেউ হারে কেউ জেতে, নম্বরের চাকা ঘোরে – গ্যাম্বলিং এক রহস্য হয়েই থাকতে পছন্দ করে।

এম আই টির ছাত্রদের ঐ গ্যাম্বলিং গ্রুপ যখন একের পর এক ক্যাসিনোয় গিয়ে গ্যাম্বলিং খেলা জিতে নিচ্ছিল, ক্যাসিনো কতৃপক্ষ গুলোর রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। বহুদিন ধরে ওরা ভেবেই পাচ্ছিল না, কি ভাবে গ্যাম্বলিং-কে প্রতিদিন কিছু মানুষ হারিয়ে দিচ্ছে? কি ভাবে সম্ভব? এক দল ছেলে প্রতি রাতে গ্যাম্বলিং এ প্রচুর টাকা জিতে নেয়? লাক্‌? ভাগ্য? জোচ্চুরি? কোনটা? আসলে ব্যপারটা সবটাই তুখোড় অঙ্কের খেলা।

তাসের খেলায় নিছক অঙ্কের নিয়মকে কাজে লাগিয়ে এম আই টির ঐ ছাত্রের দল ক্যাসিনোয় গিয়ে খেলা জিতে নিত। ঐ ছাত্রের দল বেঁধে ব্ল্যাকজ্যাক কার্ড গেম খেলে প্রচুর টাকা জিতে যেত – বহুদিন ধরে ক্যাসিনো কতৃপক্ষ প্রচুর টাকা লোকসান করার পরে, বহু গোয়েন্দা লাগিয়ে তবে ঐ দলের হদিস পায়। বিখ্যাত ঐ ছাত্র দলের নাম ছিল – এম আই টি ব্ল্যাক জ্যাক টিম।

পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বুদ্ধিমান মানুষকেই বোধহয় গ্যাম্বলিং আকর্ষণ করেছে।  মানুষের ইতিহাসের দিকে একটু গভীর ভাবে দেখলে দেখা যায়, বিজ্ঞান, অঙ্ক ও গ্যাম্বলিংএর মধ্যে কোথায় যেন এক গভীর যোগসূত্র রয়েছে।

প্রাচীনকাল থেকে অনেকেই গ্যাম্বলিংএর সুত্রকে জানার চেষ্টা করেছিল – সে প্রাচীন কালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও থেকে শুরু করে কেপলারকে যেমন গ্যাম্বলিং আকর্ষণ করেছিল তেমনি বিংশ শতাব্দীর কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ Alan Mathison Turing কেও গ্যাম্বলিং-এর অসীম সম্ভাবনার ঐ খেলাটি আকর্ষণ করেছিল।

আরও দেখা গেছে, আজকের ঐ গ্যাম্বলিং-ই আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক শাখার জন্ম দিয়েছে – যেমন আধুনিক পরিসংখ্যান, কম্পিউটিং, গেম থিয়োরি (game theory) কেওস থিয়োরি (chaos theory) বিজ্ঞানের এই শাখা গুলোর পেছনে গ্যাম্বলিং-এর অসীম সম্ভাবনার সূত্রই আসে।

সে তো গেল বিজ্ঞানের কথা। বিজ্ঞান সমস্ত সম্ভাবনাকেই যুক্তি ও নিয়ম দিয়ে দেখতে চায়, কিন্তু, যেখানে প্রতিদিন প্রচুর অর্থের খেলা চলে, বিজ্ঞানের যুক্তি তর্ক, বুদ্ধি সেখানে কতটুকু স্থান পায় কে জানে? প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই জায়গা পৃথিবীর প্রচুর ধনকুবের এসে জমায়েত হয় – আলো, রোশনাইের মধ্যে হার, জিতের খেলা চলে।

ছোট্ট দেশ মোনাকোর এক অর্থনৈতিক স্তম্ভ এই ক্যাসিনো। মোনাকোর রাজকুমারীর মস্তিষ্ক প্রসূত এই ক্যাসিনো এক সময়ে মোনাকো দেশটিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল। বর্তমানে এই ক্যাসিনো মোনাকো সরকার দ্বারা পরিচালিত। আর মধ্যযুগীয় স্থাপত্য দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই ক্যাসিনোর সুরক্ষা একদম অত্যাধুনিক। এম আই টির ঐ ছাত্র দল যারা ক্যাসিনোকে হারিয়ে দিয়ে প্রচুর টাকা জিতে নিচ্ছিল – তারা মোনাকোর এই ক্যাসিনোতে এসে ধরা পরে গিয়েছিল।

মোনাকো দেশটির এই ক্যাসিনো যে শুধু ধন কুবেরদেরকেই আকর্ষণ করে তা নয়, এ এক টুরিস্ট গন্ত্যব্যও বটে। ঐতিহাসিক এই ক্যাসিনোকে শুধু বাইরে থেকে দেখার জন্যেই প্রচুর মানুষ এখানে আসে।

যখন মন্টি কার্লো ক্যাসিনোর সামনে পৌঁছলাম, ফেব্রুয়ারির শেষ বিকেলের হলুদ নরম আলো ধুইয়ে দিচ্ছিল, মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের নোনা হাওয়া গায়ে মেখে আলতো পায়ে সন্ধ্যা নেমে আসছিল। আর, ঐতিহাসিক এই স্থাপত্য তখন রহস্যময় সন্ধ্যার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিল।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Monaco, Travel, Western-Europe and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s