বছরের এই সময়টা এলেই চারিদিকে ভাল রেজাল্ট করা ছেলে মেয়েদের হাসিমুখের ছবি দেখি, ভাল লাগে।
আবার ভয়ে শিটিয়েও যাই। কখন কোন খবর শুনে বসব। রেজাল্ট মনের মত হল না – চল যাই, জীবন ছেড়েই পালিয়ে যাই।
একবার এমনি এক খবর শুনে মনে হয়েছিল – ওকে কে বলে দেবে, যে কয়েকটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর লেখা মানেই জীবনের আসল শিক্ষা নয়? কে বলে দেবে, জীবন মানে যেমন অনেক কিছু পাওয়া, তেমনি জীবন মানে টুকরো টুকরো না পাওয়াও বটে।
সবে তো শুরু, তারপর জীবন যে কতো, না পাওয়ার সম্মুখীন করে দেয় – হতাশা, ছোট ছোট হেরে যাওয়া গুলোকে সঙ্গী করেই তো জীবন চলে। আবার এক নতুন পথে বাক নেয় জীবন।
শিক্ষা, মানে কি শুধুই, প্রশ্নের সঠিক উত্তর গুলো লিখে লিখে, নম্বর পাওয়া? পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী – যারাই পৃথিবীর ইতিহাস লিখেছে, তারা অনেকেই স্কুলের ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়েই ইতিহাস লিখতে পেরেছে।
ফেসবুকের স্রষ্টা মার্ক জুকেরবার্গের কথাই ধরা যাক – হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ড্রপ আউট, আর আজ সেই মার্ক জুকেরবার্গকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিই সাম্মানিক ডিগ্রি দেয়। তার মানে, হার্ভার্ডের মত ইউনিভার্সিটিও মেনে নিয়েছে, জীবনের আসল শিক্ষা শুধু ইউনিভার্সিটি বা স্কুল চত্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
বড় বড় বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, কবি, সমাজ বিজ্ঞানী, সবাই বিশ্বাস করে শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত – জীবনের শিক্ষা। জীবনকে গ্রহন করার শিক্ষা।
লাইব্রেরীর ওই বই গুলোর বাইরে যে বিশাল এক পৃথিবী আছে – যে পৃথিবীতে বাঁচতে হলে প্রতিনিয়ত নানা ধরণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, সৃষ্টিশীলতার প্রমান দিতে হয়, জীবন দেখে শিক্ষা নিতে হয় – শিক্ষার উদ্দেশ্য তাই হওয়া উচিত।
কিন্তু, আমরা যে কখন জীবনের শিক্ষাকে এক ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে বেঁধে দিয়ে, কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা দিয়েই শিক্ষাকে যাচাই করতে শুরু করে দিয়েছি, ভুলেই গেছি।
যে মানুষ গুলোকে আমরা আজ এক নামে জানি, চিনি – তাদের জীবন স্মৃতির দিকে দেখলে দেখা যায়, স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্টে ওদের নামের আগে অনেকেরই নাম ছিল – কিন্তু, সেই নাম গুলো আমরা জানি না, জানি না তারা কোথায় হারিয়ে গেল। এক অদ্ভুত চরাই উৎরাইয়ের নাম জীবন।
তাই, রেজাল্ট দিয়ে নিজেকে বিচার না করে, নিজেকে আবিষ্কার করে, নিজেকে আরও সময় দিয়ে, ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। পালিয়ে যাওয়া নয়, নিজেকে আরও একটা সুযোগ দেওয়া তো যেতেই পারে।