জুলাইয়ের ঝকঝকে উজ্জ্বল সোনালি সকালে, একদল মানুষের শান্ত ও সংযত ভিড় লক্ষ্য করে রিগার রাজপথ ধরে এগিয়ে চলেছিলাম। সেই ভিড়ের বেশিরভাগ মানুষের পড়নে ছিল হলুদ টি শার্ট, আর হাতে যে কোন বাদ্যযন্ত্র – কেউ নিয়ে আছে বাঁশি, কেউ বা মাউথ অর্গান, ড্রাম, বাজনা। আর মুখে ছিল হাসি – দেখেই মনে হচ্ছিল বেশ আনন্দের এক পরিবেশ। উজ্জ্বল দিনের সঙ্গে মানানসই এক পরিবেশ।
উত্তর ইউরোপের এক দেশ লাটভিয়া, রাস্তা ঘাটে যেখানে মানুষ খুবই কম দেখা যায় – সেই দেশটির রাজধানীতে ছুটির সকালে সেই উৎসবের আয়োজন ও মানুষের জমায়েত দেখে কৌতূহল তো হয়েই ছিল। ভিড়ের দেশের মানুষ আমরা, ভিড় আমাদের টানে।
সেই দিনটি আসলে ছিল – লাটভিয়ার জাতীয় দিবস। সেই দিনে লাটভিয়ার জনতা, স্বাধীনতার সেই আনন্দ উৎসব পালন করার জন্যে মুক্তি স্তম্ভের নীচে জড়ো হয়েছিল। এই মুক্তি স্তম্ভ প্রায় গত একশো বছর ধরে রিগার প্রধান ল্যান্ডমার্ক হিসাবে বিখ্যাত। লাটভিয়ার স্বাধীনতা, মুক্তি, ও সার্বভৌমত্বর প্রতীক এই স্তম্ভ।
যারা লাটভিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের জন্যে শহীদ হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্যে তৈরি এই মুক্তি স্তম্ভ। তাই লাটভিয়ার জাতীয় দিবসে, সেই শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে, তাদের স্মরণ করতে ওরা জমায়েত হয়েছিল। এই মুক্তি স্তম্ভ, লাটভিয়ার সাধারণ মানুষের দান ও সংগৃহীত অর্থে তৈরি হয়েছিল।
আকাশ ছোঁয়া স্তম্ভের একদম উপরে এক নারীমূর্তি, হাতে তার তিনটে সোনালি নক্ষত্র – যা কিনা লাটভিয়ার তিন ঐতিহাসিক প্রভিন্স ও তাদের মধ্যে একতাকে বোঝায়। প্রায় তেতাল্লিশ মিটার উচ্চতার এই মনুমেন্টের নীচে আরও ভাস্কর্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় – যা কিনা সবই লাটভিয়ার স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক।
লাটভিয়ায়, সোভিয়েত শাসন কালে এই মুক্তি স্তভ ও স্কোয়ারে যে কোন ভিড় বা জমায়েত একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। বর্তমানে স্বাধীন লাটভিয়া রিপাবলিককে সম্মান জানাতে, জাতীয় দিবসে লাটভিয়ার মানুষ এই মুক্তি স্তম্ভের নীচে এসে তাদের স্বাধীনতার উৎসব শুরু করে ।