পর্তুগীজ এক মিউজিয়ামের গল্প (Museu do Combatente, Lisbon, Portugal)

গল্পের বইয়ের পাতায় বা ছায়াছবির পর্দায় জলদস্যুর উপস্থিতি যতই অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চ তৈরি করুক না কেন, পনেরো শতাব্দীতে যারা সমুদ্র পথে জাহাজ নিয়ে যাতায়াত করতো – ‘জলদস্যু’ তাদের কাছে ছিল দুঃস্বপ্ন ও আতঙ্কের আরেক নাম – সেও আবার পর্তুগীজ জলদস্যু – সমুদ্রের এক হাড়হিম করা নাম ছিল।

আজও পর্তুগীজ জলদস্যু ও তাদের লুটপাট করে আনা ধন দৌলতের নানা ধরণের গল্প শোণা যায় – আর সেই সমস্ত সত্যি মিথ্যে গল্প – যে গল্প সাধারণ এক নাবিকের গল্প নয়, নয় কোন সমুদ্রের ঝড়, তিমি মাছ কিংবা জলপরীর গল্প, এ গল্প সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে যারা আতঙ্ক মিশিয়ে দিয়েছিল ‘জলদস্যু’ তাদের গল্প গুলোকে সঠিক তথ্য দিয়ে জোড়া দিতে, তাদের সভ্য ও বদলে যাওয়া উত্তর পুরুষরা এই মিউজিয়াম স্থাপন করে।

অবশ্য এই মিউজিয়াম শুধু যে জলদস্যুদের গল্প শোনানো ও দেখানোর জন্যে তৈরি তা নয় – কয়েকশো বছরের পর্তুগীজ ইতিহাসের প্রায় সমস্ত যুদ্ধ বিগ্রহ, হারা জেতার গল্প ও তথ্য দিয়ে সাজানো এই মিউজিয়াম। বিশেষ করে যুদ্ধ ফেরত ও অবসর প্রাপ্ত মিলিটারিদের তত্ত্বাবধানে, এই মিউজিয়ামে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে শুরু করে আফ্রিকার পর্তুগীজ কলোনি গুলোর সঙ্গে যুদ্ধের নানান সংগ্রহ দেখা যায়। তাই, Tagus  নদীর তীরের এই মিউজিয়ামে অনেকেই আসে – না, সেই চলে যাওয়া ভয়ংকর সময়কে সম্মান জানাতে নয়, বরং আধুনিক এই স্বাধীন সময়কে সম্মান জানাতে। আজকের এই স্বাধীন পথে হাঁটতে মানুষকে যে কতো পথ হাঁটতে হয়েছে, কতো যুগ লেগেছে – তা যেন প্রমান করে দেয় ঐ মিউজিয়াম।

যুগ যখন বদলে গেল, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জলদস্যুরা আর বদলাতে পারলো না, নাকি, ওরাও বদলে গেল, জল-সমুদ্র ছেড়ে এসে জন-সমুদ্রে মিশে গেল। তবে সমুদ্রের সেই দস্যুদের এই মিউজিয়াম যে জলদস্যুদের জীবন ধারণের প্রশংসা করে তা নয় – এই মিউজিয়াম যেন মানবতার ইতিহাসে যুগ বদলের  এক পদচিহ্ন।

এই মিউজিয়াম যেন আরও ভালো করে প্রমান করে দেয় – সমাজের যা কিছু খারাপ, যা কিছু মন্দ, যাই সমাজের জন্যে, মানুষের জন্যে অমঙ্গল – সবই একদিন ঐ মিউজিয়ামের কোণায় স্থান পাবে – মানুষের বহমান চলমান জীবন ধারণে যার কোন স্থান হবে না – সে যাই কোন না কেন, যেমনই হোক না কেন।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Southern-Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান