পর্তুগীজ ওয়াইন, পোর্ট -১ (Port, Portuguese fortified wine)

ফরাসীরা তাদের বিখ্যাত ওয়াইন নিয়ে যতই গর্ব করুক না কেন, পর্তুগীজরাও তাদের দুরো ভ্যালির পোর্ট ওয়াইন নিয়ে কম গর্ব করে না। অবশ্য ফরাসী ওয়াইনের থেকে পোর্ট ওয়াইন যথেষ্ট পরিমাণে আলাদা, ওয়াইন তৈরির পদ্ধতি, পরিবেশন ও আঙুর চাষের ধরনও অনেক আলাদা।

তবে, পর্তুগালের এই অতি নিজস্ব ওয়াইন সৃষ্টির পেছনে ব্রিটিশ ও ফরাসীদের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধই দায়ী ছিল – সতেরো ও আঠারো শতাব্দীতে ব্রিটিশ ও ফরাসীদের ক্রমাগত যুদ্ধে, ব্রিটিশরা ফরাসী ওয়াইন কেনা একদমই বয়কট করে দিয়েছিল। আর সেই সময় ব্রিটিশরা পর্তুগীজদের কাছ থেকে ওয়াইন কিনতে শুরু করেছিল।

এদিকে, পর্তুগালের দুরো নদীর উপত্যাকায় খাড়া পাহাড়ের গায়ে যে আঙুর চাষ হত, তা থেকে পর্তুগীজরা প্রায় কয়েক শত বছর ধরে ওয়াইন তৈরি করে এসেছে – আর যেহেতু, পর্তো শহরকে ঘিরে পর্তুগীজ ওয়াইনের ব্যবসা জমে উঠেছিল – ওয়াইনের নামকরণও তাই শহরকে ঘিরেই হয়েছিল – পোর্ট। বলা যেতে পারে, পোর্ট ওয়াইন ইউরোপিয়ান ক্লাসিক ওয়াইনের মধ্যে অন্যতম ছিল।

তাই, ব্রিটিশরা তখন পর্তুগীজদের কাছ থেকে ওয়াইন কেনা শুরু করেছিল। তাছাড়া, দুরো নদীর তীরে পর্তো শহরের অবস্থান ছিল পোর্ট ওয়াইন রপ্তানির জন্যে অতি উত্তম।

দুরো ভ্যালির নানান জায়গা থেকে ওয়াইন সংগ্রহ করে, দুরো নদীর বুকে সরু সরু নৌকায় করে, কাঠের পিপে ভর্তি ওয়াইন পর্তো শহরে পৌঁছত, তারপর পর্তো থেকে, জাহাজে ইংল্যান্ডে পাঠানো হতো – দুরো নদীর বুকে ভাসমান, পোর্ট ওয়াইন রপ্তানির জন্যে বিশেষ ধরণের, ছোট ছোট নৌকো গুলোকে Rabelos, বলা হয়।

বর্তমানে ট্রেন যোগাযোগের উন্নতির ফলে, দুরো নদী পথে ওয়াইন রপ্তানির কথা এখন ইতিহাস, কিন্তু, সেই ঐতিহাসিক নস্টালজিক ছবি তৈরির জন্যেই কিংবা ওয়াইন রপ্তানির সেই স্বর্ণ যুগের কথা মনে করিয়ে দিতে, দুরো নদীর বুকে আজও অনেক ছোট নৌকোর মধ্যে সাজানো কাঠের পিপে ভাসতে দেখা যায় – পুরনো দিনের এক ছবি তৈরি হয়।   

আর, তাছাড়া, বর্তমানে টুরিস্টদের জন্যে, দুরো ভ্যালির অনেক quinta বা ওয়াইন এস্টেট খোলা থাকে, যেখানে ক্লাসিক পদ্ধতিতে পোর্ট ওয়াইন তৈরি যেমন দেখা যায়, তেমনি পোর্ট ওয়াইন কেনাও যায়। কিংবা, কোন পোর্ট ওয়াইন কোম্পানির কেভের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া সেরে নেওয়া যায়।

চলবে

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Southern-Europe, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান