গুগুল ম্যাপের স্যাটেলাইট ভিউ দেখলে আরও স্পষ্ট হয় – আজকের এক অত্যাধুনিক শহর মাদ্রিদের একদম কেন্দ্রে, বিশাল এই ঘন সবুজ এলাকা El Retiro বা Buen Retiro Park কি ভাবে, মাদ্রিদ শহরের ফুসফুসের মতো কাজ করে। বর্তমানে, যদিও এই বিশাল পার্কের দরজা জন সাধারণের জন্যে সারা বছরই খোলা থাকে, কিন্তু সতেরো শতাব্দীতে তৈরি এই পার্ক, উনিশ শতাব্দী পর্যন্ত স্পেনের রাজ পরিবারের অন্তর্গত ছিল।
প্রায় পনেরো হাজার বড় বড় গাছ দিয়ে সাজানো এই বিশাল পার্কের লোহার গেটের বাইরেই মাদ্রিদ শহরের যাবতীয় শহুরে ব্যস্ততা, গতিবেগ – কিন্তু, লোহার গেটটি পার হলেই এই বিশাল পার্কের নির্জনতা, উদারতা, ও সবুজের মুখোমুখি হয়ে যাওয়া যায় – এখানে এসে দেখি মাদ্রিদের সমস্ত শহুরে ব্যস্ততা উধাও!
এখানে আছে এক নিবিড় শান্তি, পথ চলার সবুজ রাস্তা, স্থানীয় মানুষের নির্ভেজাল নির্জনে হাঁটা, শরীর চর্চা ও সময় কাটানোর এক শান্ত জায়গা। কিন্তু, শুধু স্থানীয় মানুষই কেন, মাদ্রিদকে যারাই দেখতে আসে, এই পার্কে একবার না এলে, মাদ্রিদকে যে অর্ধেক না দেখাই রয়ে যায় – তাই টুরিস্টও এই মাদ্রিদের এই বিশাল পার্কে একবার আসে। ইউরোপের কোনও রাজধানী শহরের কেন্দ্রেই এই ধরণের বিশাল পার্ক দেখা যায় না – তাই, এই পার্ক মাদ্রিদের এক বিশেষত্ব যা নিয়ে মাদ্রিদ ইউরোপের মধ্যে এক অনন্য শহর হিসাবে গণ্য হয়।
বিশাল এই পার্কে একবার ঢুকে পড়লে, হাঁটতে হাঁটতে সময় যেন কি ভাবে কেটে যায় – বোঝাই মুশকিল – এক পাশে, মানুষের তৈরি বিশাল লেক, লেকের ওপাশে ব্রোঞ্জের তৈরি অলংকৃত Monument to King Alfonso XII , প্রথমেই নজর কেড়ে নিতে বাধ্য।
তাছাড়া, প্রচুর ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো এই পার্কের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যটি, যার টানে অনেক টুরিস্ট এই পার্কে আসে – স্পেনের সেই সবচেয়ে বিতর্কিত ভাস্কর্যটি হল – Monument of the Fallen Angel ।
বলা হয়, স্প্যানিশ শিল্পী Ricardo Bellver এর বিখ্যাত মাস্টারপিস এই স্ট্যাচুটি স্পেনে যতটাই বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, ঠিক ততটাই প্রশংসাও পেয়েছিল। উনিশ শতাব্দীর বিতর্কিত ও প্রথম পুরষ্কার প্রাপ্ত এই স্ট্যাচুটির প্রেরণা ছিল মিল্টনের কাব্যগ্রন্থ Paradise Lost এর চরিত্র Lucifer, যে কিনা স্বর্গ থেকে পতিত হয়েছিল। আর সম্ভবত এই ভাস্কর্যই পৃথিবীর একমাত্র ভাস্কর্য, যেখানে ভাস্কর্যের প্রেরণা ছিল শয়তান ( devil) স্বয়ং।
তবে, আজকের মাদ্রিদে, এই বিতর্কিত ব্রোঞ্জ স্ট্যাচুটিকে Buen Retiro পার্কের মধ্যমণি বলা যায়, একে ঘিরে সুন্দর ফোয়ারা, ফুলগাছ, মানুষের আনাগোনা, নির্জনতা – এই সমস্ত যেন, সব বিতর্ককে বহু দূরে সরিয়ে রেখে, শুধু নিখাদ শিল্পকেই সম্মান জানাতে চায়।