শোণা যায়, মিশরের এক প্রাচীন সমাধিতে এক পাত্র মধু পাওয়া গিয়েছিল্, প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো মধু – তবুও বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়ে দেখেছিল সেই মধু আজও খাওয়া যেতে পারে – এক ফোঁটা মধুও নষ্ট হয় নি? কি ছিল তার রহস্য, সত্যিই কি মধু হাজার হাজার বছর ধরে খারাপ না হয়ে, অক্ষত অবস্থায় থাকতে পারে? কি আশ্চর্য – হাজার বছরের পুরনো মধুর পাত্র থেকে আজকের দিনেও অনায়াসে এক চামচ মধু নিয়ে খাওয়া যায় – ‘বেস্ট বিফোর’ বলে কোন ট্যাগ নেই? এ হতে পারে?
পৃথিবীর কোন খাদ্য দ্রব্যেরই বোধহয় এমন দীর্ঘ সেলফ লাইফের ইতিহাস নেই, অন্তত বৈজ্ঞানিকদের কাছে মধুর এই দীর্ঘ সেলফ লাইফের চমৎকারিতা রীতিমত চমকই বলা যায়। তবে, মধুর এই চমৎকার গুণের কথা আমাদের দেশের মধু শিকারিদের কাছে কোন এক নতুন বিষয় নয়।
ওদের মধু শিকারিই বলব – কারণ ওরা বর্ষার ঠিক আগে আগেই বিভিন্ন বাড়ী বাড়ী গিয়ে জিজ্ঞেস করে – বাড়ীর বাগানে মৌমাছিরা চাক বেঁধেছে কিনা। চাক বাধলে, মৌচাক ভেঙ্গে মধু বের করে দেয় – অর্ধেক মধু ওরা নেয় ও অর্ধেক মৌচাকের মালিক, মানে যাদের বাড়ীতে মৌচাক হয়েছে, তাদের দিয়ে যায়। আর চাইলে, ওদের ভাগের অর্ধেক মধু ওরা বিক্রিও করে দেয়।
এখন আমাদের দেশে যেমন জঙ্গল কেটে ফ্ল্যাট বাড়ী উঠে চলেছে – মৌমাছিরাও যায় কোথায়, তাই মৌমাছিরা খালি ফ্ল্যাটের বেলকনি থেকে শুরু করে ছাদ, জলের ট্যাঙ্ক – যেখানে পারে, মৌচাক তৈরি করে যায়।
যাইহোক, তেমনি, এক মধু শিকারি যখন বলল – নিন না, সব মধুই রেখে দিন, আমাকে শুধু টাকা দিয়ে দিন।
আমি বললাম – এতো মধু নিয়ে কি করবো?
মধু শিকারি, বিনা দ্বিধায় বলল – আপনি যতদিন ইচ্ছা রেখে রেখে খেতে পারেন, কিচ্ছু হবে না।
অগত্যা, মধু সম্বন্ধে ওর জ্ঞান দেখে আর কথা না বাড়িয়ে মধু রেখেই দিতে হল। এবার কয়েক কিলো মধুর মালিক হয়ে গিয়ে – মধু খাওয়া সত্যিই কতটা ভালো সে নিয়ে একটু জানার ইচ্ছে হল।
শতাব্দী কাল ধরে মধুর গোপন পৌষ্টিক ও ঔষধীয় গুণের কথা মানুষ জেনে এসেছে। মধুর ছত্রাক রোধী ও ব্যকটেরিয়ারোধী গুণের জন্যে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ মধুকে নিজেদের খাদ্য সংস্কৃতির অঙ্গ করে নিয়েছে। নিয়মিত এক চামচ মধু খেলে শীতকালের সর্দি কাশির হাত থেকে যেমন বাঁচা যায়, তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় মধু।
প্রকৃতির এই মিষ্টি তরলটিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় – যা কিনা মধ্য বয়সের স্মৃতি শক্তি লোপ জনিত রোগ থেকে বাঁচায়। আরও যে কত গুণে ভরপুর এই সোনালি তরলটি।
তাই, মনে হল, অনেক দিন ধরেই তো এক কাপ চা দিয়ে দিন শুরু হোতো, এবার থেকে না হয় এক চামচ মধু দিয়ে দিনের শুরু হোক।