সেই সময় দালির সঙ্গে ওয়াল্ট ডিজনির দেখা হয়েছিল। যিনি রূপকথার কল্পনাকে রূপ দেওয়ার জনক ছিলেন, সেই ওয়াল্ট ডিজনিও দালির শিল্পের গলন্ত রূপ, দৃষ্টি বিভ্রমের চমৎকার কৌতুক, অদ্ভুত সুর-রিয়েল দৃশ্য তৈরি করার ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন – তিনিও চেয়েছিলেন দালিকে। দালিকে তিনি অ্যানিমেশন সিনেমার দৃশ্য তৈরি করতে বলেছিলেন। দালি বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে, প্রায় সমস্ত মাধ্যম – ফ্যাশন, ইন্টিরিয়র ডিজাইন, সিনেমা, অ্যানিমেশন, ফাইন আর্ট, ছবি – সব জায়গাতেই তার প্রতিভাকে প্রসারিত করেছিলেন।
টাইম ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে লাইফ ম্যাগাজিন – সব জায়গাতেই দালিকে নিয়ে চর্চা, দালি কে নিয়ে আলোচনা, দালির ছবির প্রদর্শনী – সব মিলিয়ে দালি সুররিয়েলিজম শিল্পেকে বাস্তবের মাটিতে স্থাপিত করেছিলেন। তখন যদিও, প্যারিসের সুররিয়েল গ্রুপ ব্যবসায়িক ভাবে সফল দালিকে আসল সুর-রিয়েল মানতে নারাজ ছিল, কিন্তু, দালি নিজেকে সুররিয়েলিজ্যমের সত্যিকারের নায়ক ভাবতেন।
সুর-রিয়েলিজ্যমের উদ্দেশ্য মানুষের স্বাভাবিক গৎবাঁধা চিন্তাধারাকে অন্যরকম ভাবে একটু ধাক্কা দেওয়া, নাড়া দেওয়া, ভাবানো, চমকে দেওয়া, অবাস্তবের সঙ্গে বাস্তবের পরিচয় ঘটানো – আর সেই উদ্দেশ্যে দালি সম্পূর্ণ ভাবে সফল ব্যক্তি ছিলেন।
আর, দালির জীবনের সমস্ত সফলতার মূল প্রেরণা কিন্তু ছিলেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও তাঁর সাইকো এনালাইসিসের অদ্ভুত থিয়োরি, অবচেতন মনকে মুক্ত করার থিয়োরি – আর তাই সালভাদর দালি, সিগমুন্ড ফ্রয়েডকে ধন্যবাদ জানাতে, শ্রদ্ধা জানাতে, ফ্রয়েডের লন্ডনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা করেছিলেন।
যাইহোক, প্রাগের সঙ্গে সালভাদর দালির কি যোগাযোগ ছিল, জানা নেই, তবে প্রাগের ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রে, প্রতিদিন যেখানে প্রাগ শহরের জীবন স্পন্দিত হয়, সন্ধ্যায় যেখানে মেশে বোহেমিয়ান মিউজিকের দামাল সুর, যেখানে পরিবেশে ছড়ায় মধ্যযুগীয় রোমান্টিকতা – তার এক দিকে সালভাদর দালির ছোট্ট মিউজিয়ামটি সবার নজর কেড়ে নেয়। দালি প্রাগের বর্তমান সুররিয়েলিজমে বেঁচে থাকেন, প্রেরণা দেন।
হয়তো জীবনে, চলার পথে একটু বিমূর্ত চিন্তাধারা, একটু অন্যরকম করে ভাবা, দেখা, একটু অযৌক্তিক চিন্তা ধারার প্রয়োজন আছে – জীবন নিয়ে খুব বেশী একই রকম ভাবলে, জীবন ধারাকে একই রকম চোখে দেখলে, একই মাপকাঠি দিয়ে বিচার করতে বসলে, হয়তো মানুষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র গুলো হারিয়ে যায়, মানুষের গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে সংঘর্ষ বাঁধে, মানুষ মেশিনে পরিণত হয়, মানুষ বিষণ্ণ হয় – আর মানুষের চিন্তা ধারার অদ্ভুত বৈচিত্রই বোধহয় মানুষকে পৃথিবীতে তার অতি নিজস্ব এক জায়গা দেয়, চিন্তার প্রসার ঘটায়, কল্পনাকে উন্মুক্ত করে, মুক্তি দেয়, ভাবায়, ভালোবাসায়, স্বপ্ন দেখায়, এগিয়ে নিয়ে যায়।
শেষ