ইউরোপের পথে দাবার চাল (Chess in European City)

সামারের উজ্জ্বল ঝকঝকে দিনে, ইউরোপের নানান শহরে যখন ছুটির এক হালকা মেজাজ চলে, আবহাওয়ায় থাকে এক ফুরফুরে আরামদায়ক উত্তাপ – ঠিক সেই সময়ে ইউরোপের নানান শহরের পার্কে, স্কোয়ারে, খোলা জায়গায় প্রায়ই অতি পরিচিত এক দৃশ্য দেখা যায় – পৃথিবীর প্রাচীনতম, প্রায় হাজার বছরের পুরনো ও জটিল দাবা খেলার মারপ্যাঁচ, চাল, ধাঁধাঁ।

একদল বয়স্ক বা মধ্যবয়সী মানুষ একমনে সাদা কালো ছকের মধ্যে ঘুঁটি সাজিয়ে দাবার চাল ভেবে চলে – আর সেখানে, এ খেলা শুধু মাত্র দুই জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে – দুই জন যখন দাবা খেলে – চাল দেয়, আশপাশে দাঁড়িয়ে যদিও অনেকেই খেলা দেখে, হয়তো পথ চলতি লোকেরা ক্ষণিক দাঁড়িয়ে মনে মনে চালও ভাবে, কিন্তু, চুপ দাঁড়িয়ে দেখে, ভাবে। আবার, প্রতিটি চালের প্রচুর সম্ভাব্য চাল ভাবতে ভাবতে হেঁটে যায়।

দাবা খেলার ইতিহাসের পথ ধরে পিছনের দিকে তাকালে, দেখা যায় – ইউরোপের অনেকেই জানে, প্রাচীন মিশর ও ভারতবর্ষে দাবা খেলার প্রচলন ছিল।

প্রাচীনকালের মানুষ যখন সমুদ্র পথে জাহাজ নিয়ে সোনাদানা, মশলা ইত্যাদি নিয়ে বানিজ্যে যেত – সঙ্গে থাকতো দাবা খেলার সরঞ্জাম। ধীরে ধীরে, ইউরোপের নানা দেশে দাবা খেলাটির জটিলতা, কৌশল, প্রচুর চালের সম্ভাবনার রহস্য, বুদ্ধির মারপ্যাঁচ খুবই জনপ্রিয় হতে শুরু করেছিল। তখন, এই খেলা শুধু যে অবসর সময়ের খেলা হয়েই রইল তা নয়।

ষোল শতাব্দীর ইতালিতে, পৃথিবীর প্রথম দাবা খেলার ক্লাব তৈরি হয়েছিল। পৃথিবীর নামী মানুষ – নেপোলিয়ান, রানী ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে চার্চিল, এরা সবাই অবসর সময়ে নিজের বুদ্ধিকে শানিয়ে নিতে, কাজে মনোযোগ, একাগ্রতা বাড়াতে দাবা খেলতে ভালোবাসতো।

আমরা চিরকালই দাবা খেলাকে বসার ঘরের খেলা বলেই জেনে এসেছিলাম, আমাদের দাবার ঘুঁটি গুলোও ছোট ছোট – পকেটে ঢোকানোর মতো, কিন্তু, ইউরোপের পথের দাবার ঘুঁটি গুলোর উল্লেখ যোগ্য মাপের বড় এবং খোলা আকাশের নীচে সবুজ পার্কে খেলার জন্যেই বোধহয় আরও বেশী চোখে পড়ে – তাছাড়া, সামারের রোদ্দুরে মেপল কিংবা ওক  গাছের ছায়ায়, দাবার বড় বড় ঘুঁটি গুলো ও ঐ মানুষ গুলো যেন এক শান্ত টিপিক্যাল ইউরোপিয়ান ছবি তৈরি করে – এ যেন জীবনেরই এক প্রতিচ্ছবি – কোন চালে, কোন ঘুঁটি দিয়ে কে যে কিস্তিমাৎ করবে, কে জানে।

তবে, মানুষের জীবন যে দাবার চালের চেয়েও অনেক বড়, অনেক বিস্তারিত – আর হয়তো, দাবা খেলা মানুষকে জীবনের অসীম সম্ভাবনার খেলাটি শিখতে সাহায্য করে, ভাবতে সাহায্য করে – তাই, এই সাদাকালো ছক কাটা নক্সা ও বত্রিশটা ঘুঁটি, হাজার বছরের পথ অতিক্রম করে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়, ভাবায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s