বাল্টিক অ্যাম্বার – জীবন্ত পাথর! ( Baltic amber)

বাল্টিক সমুদ্র তীরের এক অদ্ভুত সুন্দর, রহস্যময় গাঢ় হলুদ রঙের পাথর – যখন মানুষ কুড়িয়ে পেয়েছিল, ভেবেছিল খুবই রহস্যময় এক ম্যাজিক্যাল পাথর পেয়ে গেছে – আসলে সত্যিই সেই পাথর ছিল রহস্যময়, কারণ, সেই পাথর লক্ষ লক্ষ বছরের সময় অতিক্রম করেছে। বলা যায় – প্রাগৈতিহাসিক সময়কে বন্দী করেছে সেই হলুদ উজ্জ্বল স্বচ্ছ পাথর।

কিন্তু, কি ভাবে? – ঐ পাথরের মধ্যে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীট পতঙ্গ – যেমন মশা, পিঁপড়ে, পোকা, মাছি, মৌমাছি ইত্যাদি, আবার কখনো প্রাগৈতিহাসিক কোন ছোট্ট ফুলের দেহাবশেষ ফসিল বন্দী হয়ে আছে – আর সেই হলুদ স্বচ্ছ পাথরের ভেতরে সেই প্রাগৈতিহাসিক ক্ষুদ্র প্রাণী গুলোর ফসিল খালি চোখেই দেখা যায় – তাই প্রত্যেকটা পাথরই প্রাগৈতিহাসিক সময়ের আশ্চর্য সব গল্প বলার ক্ষমতা রাখে – এমনকি, কল্প বিজ্ঞানের গল্পেও ইন্ধন যোগায় ঐ হলুদ পাথর – এম্বার।

আবার, যুগ যুগ ধরে পাথর প্রেমী ও সংগ্রহকারীদের কাছেও এই অদ্ভুত হলুদ পাথর – এম্বার, প্রচুর মর্যাদা পেয়ে এসেছে। অবশেষে, যথারীতি মহিলাদের যে কোন পাথর ভালো লাগার প্রধান প্রকাশ মানেই, গহনা তৈরি করে নেওয়া – তাই, ঐ অদ্ভুত পাথর দিয়ে ডিজাইনার গয়নাও তৈরি হয়ে যায়। বহু দিন ঐ আশ্চর্য পাথরটির সৌন্দর্য বাল্টিক সমুদ্র তীরের মানুষ ও ইউরোপের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু, একটা সিনেমা ঐ হলুদ পাথরটিকে পৃথিবী বিখ্যাত করে দিয়েছিল। মনে পড়ে? জুরাসিক পার্ক সিনেমাটি – যেখানে, এক হলুদ পাথরের মধ্যে ফসিল বন্দী মশার দেহ থেকে ডাইনোসরের রক্তে, ডাইনোসরের জিন পেয়ে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে বৈজ্ঞানিকরা ডাইনোসরকে এই পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল? এম্বার মানুষকে এতটাই ভাবিয়েছিল!

আসলে, ডাইনোসরের যুগে অনেক গাছ ডাইনোসরদের খাদ্য হওয়ার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে এক ধরণের গাঢ় রস নিঃসৃত করতো, আর ঐ রসে যে কোন ছোট কীট পতঙ্গ জীবন্ত অবস্থাতেই আটকে যেত, এবং দীর্ঘ সময়ের পথ অতিক্রম করে অক্ষত অবস্থায় ফসিলে পরিণত হয়েছিল – যেন, দূর অতীতের কোন এক গলন্ত সময়ে আটকে গিয়ে, ওরা এক স্তব্ধ সময়ে পরিণত হয়েছিল।

সেই সিনেমাটি দেখে, অনেকেই হলুদ পাথর – এম্বার সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়েছিল। সাধারণত প্রাগৈতিহাসিক সময়ের বহু প্রাণীই তো ফসিলে পরিণত হয়েছিল, কিন্তু, সেই পাথুরে ফসিলে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের দেহ অক্ষত থাকে না, কিন্তু, এম্বার যে ভাবে ফসিলে পরিণত হয়, এর মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট প্রাগৈতিহাসিক কীটপতঙ্গ গুলোর দেহ একদম ত্রিমাতিক অবস্থায় অক্ষত ভাবে ফসিলে পরিণত হয় – আর এম্বারের এই আশ্চর্য বৈশিষ্ট, ও অদ্ভুত হলুদ রং একে অন্যান্য ফসিল থেকে আলাদা করেছে – ও মানুষকেও কৌতূহলী করে তুলেছিল।

আর, অদ্ভুত ভাবে এই হলুদ এম্বার বাল্টিক সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের অবদান, পৃথিবীর অন্য কোথাও এতো পর্যাপ্ত পরিমাণে এম্বার পাওয়া যায় না। তাই, বাল্টিক অঞ্চলের দেশ গুলোর, যে কোন শহরে গেলেই দেখা যায় এম্বারের ছড়াছড়ি। বাল্টিক সমুদ্র তটে বালুর সঙ্গেও মিশে থাকে এম্বার। আর মিশে থাকে বাল্টিক অঞ্চলের মানুষের জীবন যাপনে, শিল্পে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Baltic-Countries, Europe, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s