গথেনবার্গ শহরের ব্যস্ততার মধ্যে, Linnéplatsen বাস স্টপে নেমেই, যে এক বিশাল সবুজ, কমলা, ও হলুদে জড়ানো এক পার্কের মুখোমুখি হয়ে যাবো – তা আগে কল্পনা করতে পারিনি।
এখানে শহরের মাঝেই, অক্টোবরের পাতা ঝরার অপূর্ব রঙে আঁকা এই পার্কের প্রকৃতির ক্যানভাস – একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, তাই, হাওয়ায় ঠাণ্ডার তীব্রতার সঙ্গে তখনো একটু ভিজে ভিজে ভাব মিশে ছিল – ভেজা ঘাসের উপরে ঝরে যাওয়া হলুদ কমলা পাতা গুলো মাখামাখি হতে হতে, ফুটিয়ে তুলেছিল এক অপূর্ব রঙিন ছবি।
গত একশো বছর ধরে, গথেনবার্গের এই পার্ক – Slottsskogen, শহরবাসীদের অক্সিজেন সরবরাহ করে চলেছে। আগে, এই পার্কের জায়গা Älvsborg প্রাসাদের এস্টেটের অন্তর্গত ছিল, যা কিনা শুধুমাত্র উচ্চবিত্তদের শিকার করা, ফল চাষ করার জায়গা ছিল।
কিন্তু, উনিশ শতাব্দীতে যখন গথেনবার্গ শহরের জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করল, গথেনবার্গ শহর প্রশাসন, শহরবাসীর প্র্যতেকের জন্যে একমুঠো সবুজ জায়গার প্রয়োজন অনুভব করল – যেখানে, ছুটির দিনে শহরবাসীরা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে পারে।
তারপর, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রকৃতির নিজস্ব গাছ-গাছালি ও তৎকালীন ইংলিশ গার্ডেনের প্রেরনায় তৈরি হল, গথেনবার্গের এই Slottsskogen পার্ক – ঘাস দিয়ে ঢাকা বড় মাঠ, আকাশ ছোঁয়া প্রচুর গাছ, চিড়িয়াখানা – এই সব নিয়ে এই পার্ক সত্যিই গথেনবার্গ শহরের মানুষের নিজস্ব প্রকৃতির কোলে বিনোদনের এক ঠিকানা।
এখানে অক্টোবরের প্রকৃতির মাতাল সৌন্দর্য কেমন যেন সম্মোহিত করে দেয়, সুন্দর আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে, ছোট্ট এক জঙ্গল টিলায় উঁচু উঁচু গাছেদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে যেতে, আবার শুরু হয়ে যায় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নেশা।
আবার, পথ চলতে চলতেই দেখি বৃষ্টি থেমে যায় – আর সেই দিনের মেঘ বৃষ্টির ধূসর ষড়যন্ত্রের কাছে Slottsskogen পার্কের প্রকৃতি যেন কিছুতেই হার মেনে নিতে চায় নি – তাই, সেও আরও রঙিন, আরও গভীর স্বপ্ন মোহ তৈরি করে চলে, রঙিন ছবি আঁকে – যার টানে মানুষ মেঘ বৃষ্টি ঠাণ্ডার কূট চাল উপেক্ষা করেও এই পার্কের রঙিন পথে হাঁটতে আসে, দেখতে আসে।
আর আমরা, যে পথে আর কোনও দিন আসবো না, যে রঙিন ছবি আর কোনও দিনও দেখবো না – সেই পথ, সেই পাতা ঝরার হলুদ ছবিকে ধরে রাখার, সেই ধূসর হলুদ রঙিন মুহূর্তকে অবচেতন মনে বন্দী করার চেষ্টা করে চলি – হয়তো, কোন এক ভোররাতের স্বপ্নে, এমনি এক হলুদ-সবুজ জঙ্গলে নিজেদেরকে খুঁজে পাবো।