সেই সময়ের ফিজিক্সের নামকরা জার্নাল ছিল Annalen der Physik , জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হোতো। সেই সময়ের ইউরোপের নাম করা বিজ্ঞানীদের লেখা, আবিষ্কার ছাপানো হোতো সেই পেপারে।
আইনস্টাইন সুইজারল্যান্ডে থেকে প্যাটেন্ট অফিসের ক্লার্ক হয়েও তার কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতোই নিশ্চিত ছিলেন ও যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন কিংবা আশাবাদী, তিনি সেই জার্নালেই, তথাকথিত ইউরোপিয়ান ফিজিক্স সোসাইটিকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে, তাঁর পেপার গুলো পাঠিয়েছিলেন – প্রথম পেপারে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন – আলো কি? তিনি বললেন, আলো আসলে তরঙ্গ নয় – কণা, নাম ফোটন। তার পরের পেপারে অ্যাটমের অস্ত্বিত্ব ঘোষণা করলেন, এমনকি, অ্যাটমের আকারও গণনা করেছিলেন।
তারপর আরেকটি পেপার লিখলেন – যেখানে বিখ্যাত সেই সমীকরণ, পদার্থ ও শক্তির ফর্মুলা – E = mc 2 এর জন্ম হল। রাতের আকাশের তারাদের ঝিকিমিকি দেখে বিজ্ঞানীদের আদিম প্রশ্ন ছিল – ঐ তারাদের উজ্জ্বলতা এলো কোথা হতে? আইনস্টাইন তার উত্তর নিয়ে এলেন।
সেই বছরেই আরেকটি অদ্ভুত পেপার লিখলেন – special theory of relativity। সুইস রাজধানী বার্ন শহরের বিখ্যাত ঘড়ি টাওয়ারের পাশ দিয়ে বাসে চেপে যেতে যেতে, পেছন ফিরে ঘড়ির টাওয়ারে সময়ের কাঁটা দেখে তার মনে এক অদ্ভুত প্রশ্ন জেগেছিল। যদি, বাসটি আলোর গতিবেগে ছোটে তাহলে কি হবে?
তাঁর সেই থট এক্সপেরিমেন্টে, তিনি সেই তীব্র গতির বাসে বসে, পেছনে তাকিয়ে ঘড়ির টাওয়ারের দিকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন – থট এক্সপেরিমেন্টে যখন তার বাস, আলোর গতির কাছাকাছি গেল, আশ্চর্য হয়ে দেখলেন ঘড়ির কাঁটার সময় থমকে গেছে।
পরবর্তী কালে তিনি লিখেছিলেন – থট এক্সপেরিমেন্টের সেই ফল দেখে তাঁর মনে সেদিন তীব্র এক ঝড় উঠেছিল। তিনি জানতেন, বার্নের ঘড়ির টাওয়ারে সময় যথারীতি ঠিকই চলছে, কিন্তু, আইনস্টাইনের থট এক্সপেরিমেন্টের আলোর গতিতে ছুটে চলা বাসে, ঘড়ির কাঁটার আলো তাঁকে ছুঁতে পারছে না – স্পেসে তাঁর বাস যত দ্রুত এগিয়ে চলছিল, ঘড়ির কাঁটার সময় ততই ধীরে চলছিল – আইনস্টাইনের সেই আত্ম দর্শনই ছিল – special theory of relativity র মূল দর্শন।
যেখানে তিনি বলছেন – স্পেস ও টাইম – একে অন্যের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে, স্পেস ও টাইম আসলে একই – ঠিক যেন নমনীয় এক চাদর – spacetime, যেখানে স্পেস ও টাইম হল টানাপোড়েন।
শহরের ভিড়ে, বাসে বসে আইনস্টাইন যেন মহাবিশ্বের অসীম রহস্য, সর্বশক্তিমানের সমস্ত নিয়মের এক ঝলক যেন দেখতে পেলেন, বুঝতে পারলেন।
তবে, সময়ের বিজ্ঞান যাই ছিল না কেন, পেপার গুলো পাঠিয়ে দেওয়ার পরে প্যাটেন্ট অফিসে বসে আইনস্টাইনের সময় খুবই ধীরে চলছিল।
ইউরোপের সবচেয়ে নামী সাইন্টিফিক জার্নালে পেপার পাঠিয়ে, জবাবের আশায় তাঁর যেন সময় কাটছিল না, ফিজিক্স কম্যুনিটির জবাব জানার জন্যে আইনস্টাইন উদগ্রীব ছিলেন- কিন্তু, কয়েক মাস কোন জবাব ছিল না।
চলবে