মহাবিশ্বের রহস্যের সমাধান যার সমীকরণে (এক)– আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

 

Bern, Switzerland

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত সেলিব্রিটি বিজ্ঞানী স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন – যাকে এক নামে ছেলে বুড়ো সবাই চেনে, যার সাদা চুল ও গোঁপ সহ নানান ভঙ্গির বিশেষ ছবির সঙ্গে প্রায় সবাই পরিচিত, অথচ, তাঁর একটা থিয়োরি বুঝে উঠতে পৃথিবীর অন্যান্য বিজ্ঞানীদের রাতের ঘুম উড়ে যায়।

আধুনিক বিজ্ঞানের পুরো শতাব্দী জুড়ে তিনি রাজত্ব করে গেছেন – সে অ্যাটম বোম থেকে শুরু করে, আলোর কণিকা, মহাবিশ্বের বিগ ব্যাং, রেডিয়েশন, কোয়ান্টাম ফিজিক্স, ইলেক্ট্রনিক্স – ফিজিক্সের ইতিহাসের সমস্ত পাতায় তারই নাম, তারই ছাপ – তাই টাইম ম্যাগাজিন, তার মৃত্যুর বহু বছর পরেও বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী, সবচেয়ে প্রতিভাশালী ব্যক্তি বলে ঘোষণা করেছিল। বলা যায় – প্রতিভার আরেক নাম আইনস্টাইন।

 বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন – আমি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার চিন্তা ধারাকে অঙ্কের সূত্রে, বিজ্ঞানের সহজ সমীকরণে জানতে চাই।

তাই, তিনি বিজ্ঞানকে কল্পনা করতেন, ভাবতেন। সাধারণ মানুষের জন্যে কথাটা হয়তো – দিবাস্বপ্ন, বা কল্পনা বলা যায়, কিন্তু, যেহেতু, আলবার্ট আইনস্টাইন কল্পনা করতেন, তাই তার কল্পনাকে বলা যায় – thought experiment  ।

বিজ্ঞানের নানান জটিল সমাধানের জন্যে সারা জীবন তিনি তার থট এক্সপেরিমেন্টের সাহায্য নিতেন – আর তাতেই তার কাছে মহাবিশ্বের রহস্য ও সমাধান গুলো একে একে ধরা দিয়েছিল।

ফিজিক্স মানেই জটিল ফর্মুলা, দীর্ঘ ইকুয়েশনের ভিড় – আইনস্টাইন চেয়েছিলেন, মহাবিশ্বের সমস্ত নিয়ম, সমস্ত রহস্য, সৌন্দর্য, সমস্ত শক্তিকে এক ছোট্ট সমীকরণের মধ্যে ধরে ফেলতে। সেই সমীকরণে পৃথিবীর সমস্ত রহস্যের সমাধান পাওয়া যাবে।

কিন্তু, আইনস্টাইনের কাছেও শুরুর গল্পটা ছিল সংঘর্ষপূর্ণ, হতাশাজনক। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে একুশ বছরের আলবার্ট আইনস্টাইন যখন জুরিখের সুইস ফেডারেল পলিটেকনিকের ছাত্র ছিলেন – ওনার প্রোফেসররা হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন নি, যে তাঁদের ছাত্রদের মধ্যে ঐ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রতিভাশালী বিজ্ঞানী আছেন – কারণ, কলেজ জীবনে তিনি খুব উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেন নি। এমনকি, গ্র্যাজুয়েট হয়ে গিয়ে তিনি একটা চাকরি পান নি – ভাবা যায়?

এমনকি, সেই সময় তিনি ভেবেছিলেন বিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে লাইফ ইনস্যুরেন্স বিক্রি করবেন! হতাশাগ্রস্ত আইনস্টাইন তার পরিবারকে লিখেছিলেন – জন্ম গ্রহণ না করলেই বোধহয় ভালো হোতো।

কোথাও বিকল্প শিক্ষক, কোথাও এমনি এক চাকরি করে ইউরোপের নানা শহরে তার জীবন কাটছিল। এমনকি, তার বাবা তৎকালীন এক বিখ্যাত প্রোফেসরের কাছে আইনস্টাইনের জন্যে লিখেছিলেন – যদি প্রোফেসরের কাছে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টের কোন পদ খালি থাকে। কিন্তু, ছিল না।

১৯০২ এর শুরুতে, হতাশাগ্রস্ত, বিষণ্ণ যুবক আইনস্টাইন সুইস রাজধানী বার্ন শহরে পৌঁছলেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁর জন্যে এক চাকরি জোগাড় করে দিয়েছিল – সুইস পেটেন্ট অফিসে ক্লার্কের কাজ। সপ্তাহের ছয় দিন কাজ – তাঁর কাজ ছিল সুইস সরকারের কাছে নানান সুইস আবিষ্কারকদের আবেদন পত্র খতিয়ে দেখার কাজ – গতবাঁধা কাজ ছিল – সে কাজে তাঁর খুব একটা বুদ্ধি খরচের প্রয়োজন পড়ত না।

তাই, ফাঁকা সময়ে আইনস্টাইন ভাবার সময় পেয়েছিলেন – সেই প্যাটেন্ট অফিসের ডেস্কে বসেই ছিল তাঁর কল্পনার জগত – কিংবা থট এক্সপেরিমেন্ট। সেই চাকরি করতে করতেই তিনি আলোর ধর্ম ও মহাবিশ্বের রহস্য নিয়ে থট এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন – আর তিনি তখন যা চিন্তা করছিলেন, থট এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন, তাতে মানব সভ্যতার ইতিহাস, বিজ্ঞানের ইতিহাসটা, এই মহাবিশ্বের অসীম রহস্যকে দেখার ও জানার দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে দিয়েছিলেন।

সালটা ছিল ১৯০৫ – তত দিনে সুইস প্যাটেন্ট অফিসের চাকরিটা স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল, চাকরিতে প্রোমোশনও পেয়েছিলেন আইনস্টাইন – কিন্তু, ঐ যে বিজ্ঞান ও মহাবিশ্বের অসীম রহস্য তাকে ভাবিয়ে চলেছিল – সুইস প্যাটেন্ট অফিসের ডেস্কে বসে তাঁর গভীর থট এক্সপেরিমেন্টের সাহায্যে চারটে যুগান্তকারী পেপার লিখলেন।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Inspirational and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s