সরু চালের গরম গরম নরম ভাতে এক চামচ গাওয়া ঘি, নতুন আলু সেদ্ধ, কাঁচা লঙ্কার সুবাস – আহা, এক ঝটকায় ছেলেবেলায় ফিরে যায় সময়। অবশ্য ছেলেবেলায় ঐ কাঁচা লঙ্কাটি বাদ যেত – তবে ঝাল হীন কাঁচা লঙ্কা হলে ক্ষতি ছিল না। গরম ভাত ও ঘিয়ের সেই সুবাস যেন অবচেতন মনে আজও গেঁথে আছে – ঐ গন্ধ যে ছেলেবেলাকে ফিরিয়ে আনে। নস্টালজিক এক সুবাস।
ছেলেবেলায় স্কুলে যাওয়ার আগে, প্রায় দিনের খাবার বলতে ছিল ঐ ঘি ভাত, গ্রাম থেকে সুখী গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি আসতো বাড়ীতে। আজকের দিনের বাচ্চারা হয়তো নাক সিঁটকোয়, কর্নফ্লেক্স, নুডুলস ও বিজ্ঞাপনের যত ধরণের নামী দামী ব্রেকফাস্ট না খেলে যে জাত যায় যায়। ফিগার সচেতন সুন্দরীদের কথা তো ছেড়েই দিলাম – ঘি মানে ছি, বাদ বাদ।
তাছাড়া এখন প্যাকেজড ফুড, ফাস্ট ফুডের দৌরাত্মে জনসমক্ষে ঘি-ভাত খাওয়ার কথা ঘোষণা করলে অপাংক্তেয় হওয়ার ভয় তো থাকেই, তবুও একটু সাহসী হয়ে অতি প্রাচীন কাল থেকে আমাদের জীবন যাপনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঘিয়ের গুণাবলীর দিকে একটু চোখ ফেরাই। ঘি নাকি একশো বছরেও নষ্ট হয় না – ভাবা যায়!
শাস্ত্র তো বলছে – ঋণং কৃত্যাং ঘৃতং পিবেৎ। তার মানে ঘিতে নিশ্চয় কোন ভালো গুণ আছে – স্বাস্থ্য ভালো হয়, কিংবা ঐ জাতীয় কিছু? কৌতূহলী খাদ্য বিজ্ঞানীরা ঘিয়ের চুলচেরা বিচার করে দেখছেন সত্যিই ঋণ করে ঘি খাওয়া উচিত কিনা!
নাঃ, ঠাকুমা দেখছি ঠিকই বলতেন – ঘি খেলে বুদ্ধি গজায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজম শক্তি ভালো হয়, স্নায়ুর জন্যে ভালো, দৃষ্টি শক্তি ভালো হয়, হাড় ভালো হয় – শক্ত হয়, কাজে উৎসাহ বাড়ে, এমনকি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণের ঘি খেলে যৌবনকে বহুদিন ধরে রাখা যায়, চামড়ার উজ্জ্বলতা বাড়ে – ইত্যাদি আরও কতো কি।
তারপর তো আধুনিক বিজ্ঞান ঘিয়ের অন্যান্য আরও উপকারিতার তালিকা তৈরি করেছে – ভিটামিন ই ও এ সম্বৃদ্ধ ঘি Conjugated Linoleic Acid এর উৎস, যা কিনা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।
তাছাড়া, ঘি, butyric acid এর উৎস। butyric acid এক ফ্যাটি অ্যাসিড – যা কিনা অন্য কোন তেলে পাওয়া যায় না । আধুনিক গবেষণা বলছে – পর্যাপ্ত butyric acid মানুষের অন্ত্রে killer T cell এর উৎপাদনে সাহায্য করে – তাই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। killer T cell এক ধরণের বিশেষ শ্বেত রক্তকণিকা যা কিনা cancer cells ও সংক্রামিত কোষকে মেরে ফেলে।
সে তো গেল শরীরের কথা – ঘি খেলে নাকি মনও ভালো হয়। আর তাই, আমাদের জীবন যাপনের সঙ্গে জুড়ে থাকা ঘি তার শত গুণের কথা জানিয়ে আবার রান্নাঘরে পুরনো সম্মান ফিরে পাওয়ার দাবী করে।
সত্যি-ই আহা… 🙂
হ্যাঁ, ঠিক… ধন্যবাদ। 🙂