ইউরোপের যে কোন ঐতিহাসিক শহরের জীবন যাপনের সঙ্গে জুড়ে থাকে শহরের মিউজিয়ামটি – শহরের শত বছরের ইতিহাস, শিল্প কলা, ছবি, অতীতের মানুষের জীবনের চিহ্ন ও গল্প ধরে রাখতে যার জুড়ি মেলা ভার। দেখেছি, ইউরোপিয়ানরা মিউজিয়ামে যেতে ভালোবাসে – আর সেই ভালোবাসা যে শুধু দেখা কিংবা সময় কাটানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নয় – কখনো কখনো তাদের কাজের সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে, জীবন জীবন যাপনের সঙ্গেও মিউজিয়াম জড়িয়ে যায়।
যাইহোক, জেনেভার ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রের এ গলি সে গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক খোলামেলা জায়গার মুখোমুখি হই – Musée d’Art et d’Histoire মিউজিয়াম চত্বরের সামনে। দূরে নীল পাহাড়ের রেখা ও বিশাল মিউজিয়াম নিয়ে জায়গাটির মধ্যে বেশ এক গম্ভীর ব্যস্ততা ও উচ্চতা জড়িয়ে আছে – নীচ দিয়ে চলে গেছে গাড়ির রাস্তা।
গত কয়েক শতাব্দীর শিল্প, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদির সংগ্রহ নিয়ে জেনেভায় আগেই বেশ কয়েকটা মিউজিয়াম ছিল, কিন্তু, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জেনেভার কাছে আরও প্রচুর শিল্প সামগ্রী চলে আসে – তখন, সেই শিল্প প্রদর্শনীর জন্যে আরও বড় জায়গার প্রয়োজন হয়ে পড়ে – তাই, জেনেভার ব্যঙ্কার Charles Galland এর অর্থ সাহায্যে এই বিশাল মিউজিয়ামটি তৈরি হয়েছিল – জেনেভার মানুষ তাঁর সেই অর্থ সাহায্যকে আজও মনে রেখেছে – মিউজিয়ামের দিকে যাওয়ার এক সেতুর নাম তাই Pont Charles Galland ।
জেনেভার সবচেয়ে বড় আর্ট ও হিষ্ট্রি মিউজিয়ামটির কাজ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সম্পূর্ণ হয়েছিল। এক আর্কিটেকচার কম্পিটিশনের মাধ্যমে এই বিশাল মিউজিয়ামের ডিজাইন মনোনীত হয়েছিল।
মিউজিয়ামের সংগ্রহকে নানা ভাগে ভাগ করে হয়েছে – ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডের মধ্যযুগ থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর ফাইন আর্ট যেমন যত্ন ও গুরুত্ব পেয়েছে, তেমনি, ইউরোপের প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন, রহস্যময় ঐতিহাসিক ইজিপ্টের মমি, প্রাচীন গ্রীক, রোমান ও রোমান পূর্ব সভ্যতার শিল্প নিদর্শন, বাইজেন্তাইন শিল্প কলা, ইউরোপের মধ্যযুগ ও রেনেসাঁস যুগের অস্ত্রশস্ত্র, রূপোর তৈরি প্রাচীন শিল্প, প্রাচীন কালের বাদ্যযন্ত্র, কাপড় সবই এই মিউজিয়ামে সযত্নে ঠাঁই পেয়েছে। এমনকি, মিউজিয়ামের এক অংশে প্রাচীন কালের মুদ্রাও স্থান পেয়েছে।
মিউজিয়াম প্রসঙ্গে মনে পড়ল – তুলুসের এক মিউজিয়াম কর্মীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, জিজ্ঞেস করেছিলাম – পৃথিবী তো কতো এগিয়ে চলেছে – মর্ডান আরও মর্ডান হয়ে চলেছে, প্রাচীন জিনিসকে সাজিয়ে রাখার মধ্যে সত্যিই কি কোন যুক্তি আছে? সে মিষ্টি হেসে উত্তর দিয়েছিল – প্রাচীনকে ভিত্তি করেই কিন্তু পৃথিবী এগিয়ে চলেছে, ভবিষ্যতের রহস্য কিন্তু প্রাচীনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তাছাড়া, মিউজিয়ামের নস্টালজিক পরিবেশ আর কোথায় পাবে?