সবরমতি নদীর গল্প (Sabarmati Riverfront, Ahmedabad, India)

যতদূর মনে পড়ছে, বেশ কয়েক বছর আগে যখন আহমেদাবাদকে দেখেছিলাম, আহমেদাবাদের কাছে সবরমতি নদীর অস্তিত্ব প্রায় ছিলই না বলা যায় – প্রগতিশীল শহরের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সবরমতির দশা ছিল মৃতপ্রায় – শহরের কারখানা ও মানুষের উগড়ে দেওয়া যত আবর্জনা গিয়ে নদীর বুকে জমা হতে হতে, জমা হতে হতে সবরমতি তখন শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছিল।

শীতের শুরুতে যদি এক সরু জলের রেখা দেখা যেত তাও কিছুদিনের মধ্যে শুকিয়ে যেত – এই নদীর শুকনো বুকে তখন নদীর তীরের বস্তির লোকেরা ক্রিকেট খেলত। গান্ধী আশ্রমের পাশেই সবরমতির শুকনো অন্তিম দশা দেখে মনে হয়েছিল হয়তো সবরমতি নদীটি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছেই যাবে।

কিন্তু, সবরমতির গল্পটা যে অন্যরকম ছিল – তা বেশ কয়েকবছর পরে আবার আহমেদাবাদে এসে জানলাম। সবরমতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে এখানের মানুষের প্রচেষ্টা ছিল বহু আগের। সবরমতির দুই তীরকে বাঁধিয়ে দিয়ে নদীর আসল ধারাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে প্রথম প্রোজেক্ট তৈরি হয়েছিল ১৯৬০ এ, ফরাসী আর্কিটেক্ট Bernard Kohn সবরমতির জন্যে প্রোজেক্ট তৈরি করেছিলেন। অবশ্য পরে তিনি সরে দাঁড়ান।

তারপর তো বহু বছর ধরে সবরমতির তীরে আবর্জনার স্তূপ জমা হয়েই গেছে – আহমেদাবাদের মানুষ হয়তো বা ভুলেই গিয়েছিল সবরমতির কথা। গত কয়েক শতক ধরে আহমেদাবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পালাবদলে নদীর কথা কেই বা মনে রাখে। কিন্তু, মনে হয় ‘মডেল গুজরাট’ এর প্রথম ধাপই ছিল সবরমতির দুই তীর বাঁধানো। না, এই কাজটি কিন্তু কিছুতেই সহজ ছিল না। নদীর দুই ধারে বসবাসরত প্রচুর মানুষের জীবন ধারণকে উপড়ে ফেলে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া – রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে সেই কাজ যে সহজ নয়, তা কে না জানে।

কিন্তু, সমস্ত অসম্ভব পরিস্থিতিকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা যে সম্ভব, তার প্রমান আজকের সবরমতি রিভার ফ্রন্ট। ভুলে যাওয়া শীর্ণ সেই নদীটি আজ আহমেদাবাদের হৃদস্পন্দন, জলের উৎস। এই মধ্য শীতেও নদীতে ভরা জল। বাঁধানো দুই ধারে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। দুই ধাপে নদীর দুই ধার বাঁধানো হয়েছে – এক ধাপ নীচে নদীর স্তর ঘেঁসে – যেখানে শুধু হাঁটা ও সাইকেল চালানোর রাস্তা। উপরের ধাপ আহমেদাবাদ শহরের স্তর ঘেঁসে – সেখানে পার্ক, মার্কেট, প্রচুর খোলা জায়গা – আহামেদাবাদের সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবের ঠিকানা এই সবরমতি রিভার ফ্রন্ট। আবার নীচের স্তরের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি ধরে উপরের রাস্তায়ও যাওয়া যায়।

শহরের মধ্যেই সবরমতির বাঁধানো ধার ঘেঁসে প্রায় এগারো কিলোমিটার হাঁটা কিংবা সাইকেল চালানো যায়। বর্তমানে তিনটে বোট ষ্টেশনে বোট চলাচল শুরু হয়েছে – আরও ষ্টেশন তৈরির পথে। নানা ধরণের ওয়াটার স্পোর্টসও চালু হওয়ার মুখে। নদীর ধারের বিশাল পার্ক ও ফুলবাগানের কাজ পুরো দমে চলছে। সবরমতি নদীকে ঘিরে পরিবেশ সম্পূর্ণ ভাবে পালটে গেছে – অনায়াসে ইউরোপের নদী গুলোর বাঁধানো তীরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যে নদী পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছিল আজ সেই নদী মহা সমারোহে জায়গা করে নিয়েছে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, Gujarat, India, Travel and tagged , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s