উত্তরায়ণ বা মকর সংক্রান্তির বেশ কিছুদিন আগে থেকেই গুজরাটের মানুষরা কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়, আহমেদাবাদের নানা জায়গায়, নানা গলির মোড়ে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি তৈরির তোড়জোড়, ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেওয়ার জন্যে নানা রঙের চরকি ঘোরানো শুরু হয়ে যায় – আর নানা বয়সের মানুষ ভিড় করে ঘুড়ি কেনে, আবার দক্ষ ঘুড়ি উড়িয়েদের জন্যে আহমেদাবাদের নানা দিকে রীতিমত ঘুড়ি বাজার বসে যায় – গুজরাটিরা মনে প্রানে তৈরি হয় জানুয়ারির সেই বিশেষ দিনটির জন্যে, প্রবাসি গুজরাটি দেশে ফেরে, আর গুজরাটিদের এই প্রিয় ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব কি ভাবে যেন জাতি, ধর্ম, বর্ণের বিভেদ ঘুচিয়ে দিয়ে এক আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করেছে, সেও এক আশ্চর্য বিবর্তন।
আর তাই তো, আশির দশকের শেষ থেকে শুরু করে আহমেদাবাদে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব পালন হয়ে এসেছে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে দক্ষ ঘুড়ি শিল্পীরা তাদের ঘুড়ির সম্ভার নিয়ে আহমেদাবাদের এই উৎসবে যোগ দিয়েছে।
ঘুড়ি উৎসবের দিনগুলোয় ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আমেরিকা থেকে আসা নানা ধরণের ঘুড়ি যেমন আহমেদাবাদের আকাশ দখল করে, তেমনি জাপানের লড়াকু ঘুড়ি Rokkaku ও আহমেদাবাদের আকাশে রাজত্ব করে।
সে এক দেখার মত আয়োজন – আর সেই বিশাল আয়োজনের প্রশংসা কিন্তু গুজরাটের পর্যটন দপ্তরের প্রাপ্য। ভীষণ নিষ্ঠার সঙ্গে, নিখুঁত ভাবে এই ঘুড়ি উৎসবকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা সত্যিই লক্ষণীয় ও প্রশংসনীয়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা ঘুড়ি শিল্পী তথা Kitist দের জন্যে ব্যবস্থার কোন ত্রুটি যে নেই – তা সবরমতি নদীর বাঁধানো তীরে সারি বেঁধে দাঁড়ানো লাক্সারি বাস গুলো দেখলেই আন্দাজ করা যায়।
শুধু কি আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবের চাকচিক্যেই আহমেদাবাদের এই ঘুড়ি উৎসবের মেজাজ জড়ানো? উৎসব প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে গেলেও স্থানীয়দের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই উন্মাদনা দেখা যায়।
গুজরাটিদের কাছে এ এক আশ্চর্য সময় – শীতের মিঠে রোদ পিঠে নিয়ে সবরমতি নদীর তীরে গিয়ে, কিংবা ছাদে উঠে সারাটা দিন আকাশের দিকে মুখ করে ঘুড়ি ওড়ানো, আর অন্যের ঘুড়ির কাছাকাছি গিয়ে দমফাটা চিৎকার ‘ল…পে…ট’ ‘ল…পে…ট’ তারপর কাছাকাছি অন্য কোন ঘুড়ি কাটা গেলে ‘কাপিওছে’ ‘কাপিওছে’ চিৎকারে গগন ফাটানো – সবই এই সবই এই ঘুড়ি উৎসবের অঙ্গ ও আনন্দ।
তারপর সন্ধ্যে হলেও কিন্তু বিরাম নেই – শুরু হয়ে যায় ফানুস ওড়ানো – এই ঘুড়ি, ফানুস ইত্যাদি ওড়ানোর পেছনের আসল উদ্দেশ্য কি, সে বোধহয় কেউই জানে না – কিন্তু, উত্তরায়ণের সময়ে গুজরাটে থাকলে গুজরাটি না হয়েও ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবে মেতে উঠতে কোন বাঁধা নেই।
হাওয়ায় ভর দিয়ে কাগজের রঙিন ঘুড়ি নিয়ে নীল আকাশকে ছুঁয়ে ফেলার স্বপ্নটাকে জিইয়ে রাখাই যখন এই উৎসবের মূল কথা – লাটাই ও ঘুড়ি নিয়ে স্থানীয় স্রোতে গা ভাসানোই যেতে পারে।
Wow…truly incredible… : )
Yes…True…Thanks for comment.