অষ্ট্রিয়ার ছবির মতো এক শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এক শান্ত সবুজ ফিরোজা নদী – নদীটির জল এতোই স্বচ্ছ, পাড়ের কাছে লক্ষ্য করলে মাছেদের চলাফেরা দেখা যায়। নদীটির দু’পাশে শতাব্দী প্রাচীন এই শহরের বেড়ে ওঠার ছাপ, মানুষের জীবনযাপনের অনুরণন, ক্যাথিড্রালের চূড়া, উজ্জ্বল সোনালি রোদ, এপ্রিলের এক নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, নদীর দু’পাশে বাঁধানো সবুজ পাড়ে রোদ্র স্নান সেরে নিতে নিতে শহরবাসীদের সময় কাটানো দেখে স্বভাবতই নদীটিকে আরও জানতে ইচ্ছে করে।
শান্ত, সুন্দর এই নদীটির শুরু আল্পসের পাহাড় শ্রেণী থেকে, নাম Salzach, জার্মান শব্দ Salz মানে নুন থেকে নদীর এই নামটি অনুপ্রাণিত হয়েছে। উনিশ শতাব্দী পর্যন্ত এই নদী পথ ধরে নুন রপ্তানি স্থানীয় অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল, তারপর রেল লাইন এসে নদীপথের সেই প্রাচীন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সরিয়ে দিল – কিন্তু, সেলসবার্গের এই নদীটির নাম কিন্তু রয়ে গেল Salzach।
আজ নদী পথে নুন রপ্তানি নাই বা হলো কিন্তু নদী পথে ভাসমান রেস্টুরেন্ট, নদী পথে ওয়াটার স্পোর্টস, নদী পথে সেলসবার্গ শহর দেখা, সর্বোপরি শহরের জলের উৎস ইত্যাদি সব নিয়ে আজও সেলসবার্গের জনজীবনে এই নদীটির এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে – আর সেই ভূমিকাকে সম্মান জানাতে, মনে রাখতে সেলসবার্গের মানুষ নদীটিকে খুবই যত্ন করে, পরিষ্কার করে, ভালোবাসে – আর সেই ভালোবাসার প্রমান নদীর স্বচ্ছ তিরতিরে জল, পরিষ্কার দুই পাড় যা দেখে আমাদের মতো বিদেশী মানুষেরা মুগ্ধ হয়।
যাইহোক, তারপর যখন শহর কেন্দ্র ছাড়িয়ে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে, সেলসবার্গ ক্যাসলের উপর থেকে দেখি শান্ত নদীটি কি ভাবে ক্যাসলকে ছুঁয়ে বাঁক নিয়েছে, তারপর সেলসবার্গের ঘন জনবসতিকে ছুঁয়ে নীল পাহাড়ের দিকে মিলিয়ে গেছে – ক্যাসলের উপর থেকে যতদূরে চোখ যায় নদীটি কিছুতেই নজর থেকে হারিয়ে যায় না। এক অদ্ভুত আবেদন ছিল নদীটির, তারপর তো ছিল নদীটি ছুঁয়ে আসা এক মিষ্টি মধুর মৃদুমন্দ হাওয়া, যা ক্যাসলের উপরে এসে আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছিল – সব মিলিয়ে সেলসবার্গের সেই শান্ত ফিরোজা নদীটিকে ভোলা যায় না, সঙ্গে নিয়ে ফিরতে হয়। তারপর হয়তো, দুরন্ত গরমের কোন এক দুপুরে স্মৃতি থেকে উঠে এসে ফিরোজা নদীটির ভেজা উদাসীন এক বাতাস মন শান্ত করে দেবে, স্মৃতির সেই দমকা হাওয়া মুখ ছুঁয়ে যাবে।