সারাটা দিন ধরে ল্যুভরে মিউজিয়ামের এ ঘর, সে ঘর, ও ঘর দেখতে দেখতে ক্লান্ত পা ল্যুভরে মিউজিয়ামের যে বিশাল এক গ্যালারীতে নিয়ে আসে, নাম তার Cour Marly , ল্যুভরের Richelieu wing এর নীচ তলায় কাঁচের বিশাল ছাদ দিয়ে তৈরি এই জায়গাটি দিনের আলোর আনাগোনায় উজ্জ্বল, খোলামেলা – মিউজিয়ামের সেই আঁধার ঘেরা আলোছায়ার খেলা এখানে উধাও। আর এখানে উপস্থিত হলে গ্যালারীর চারিদিকে নানা ভঙ্গিমার প্রচুর ভাস্কর্য নজর কেড়ে নিতে বাধ্য।
এই গ্যালারীতে প্রথমেই যে ভাস্কর্য রাজত্ব করে, সে হল Horses of Marly বা Chevaux de Marly – বিখ্যাত সেই ভাস্কর্যের গায়ে ফরাসী ইতিহাসের, ফরাসী বিপ্লবের অনেক কথা জড়িয়ে আছে। তারপর তো গ্যালারীর চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর ভাস্কর্যের নানা ভঙ্গিমার মাধুর্য আছেই – শিল্পী না হয়েও ফরাসীদের পুরনো সময়ের আশ্চর্য ভাস্কর্যের সংগ্রহ অবাক বিস্ময়ে দেখতে হয়, ভাবতে হয় – কতটা নিমগ্নতা, ধৈর্য থাকলে মানুষ একের পর এক এমন আশ্চর্য সৃষ্টি করে যেতে পারে – যে সৃষ্টি কালকে জয় করে রয়ে যায় মানব সভ্যতা জুড়ে – যুগের পর যুগ ধরে।
যদিও ল্যুভরে মিউজিয়ামের এই Cour Marly গ্যালারীর বয়স ল্যুভরে মিউজিয়ামের আসল বয়সের কাছে নগণ্য, কিন্তু বিশাল এই গ্যালারীর বেশীরভাগ ভাস্কর্যই ফরাসী ইতিহাসের গল্পে জড়ানো এক সময়ের চিহ্ন। এই ভাস্কর্য গুলো ফরাসী রাজা লুই চোদ্দ থেকে পনেরোর সময়ে তৈরি হয়েছিল – Château de Marly র নানা জায়গা থেকে সংগৃহীত ভাস্কর্য ল্যুভরের এই জায়গায় স্থান পেয়েছে।
ফরাসী রাজা লুই চোদ্দর সময়ে তৈরি Château de Marly প্রাসাদ ছিল রাজার শিকার খেলার প্রাসাদ – যা আজ ফরাসী ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে – বাস্তবে Château de Marly আর নেই।
সময় যখন ইতিহাসের পাতা ওলটায়, পৃথিবী থেকে অনেক, অনেক কিছুই হারিয়ে যায় – তবুও অতীত সময়ের কিছু কিছু ছাপ রয়ে যায় – কিছু রয়ে যায় মানুষের মনে, কিছু রয়ে যায় অমর সৃষ্টি হয়ে, গল্প হয়ে – যা কিনা সময়েরও সাধ্যি নেই মুছে ফেলার। আবার, কিছু মানুষ সময়ের সেই পরিচ্ছেদ বদলকে একদম মন থেকে মেনে নিতে পারে না, সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা করে চলে – আর সময়কে ধরে রাখার সেই চেষ্টাকে ল্যুভরে ছাড়া আর কেই বা বুঝবে, তাই Château de Marly র স্মৃতি চিহ্ন টুকু ধরে রাখতে ল্যুভরের এক অংশ নিবেদিত। ল্যুভরের মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে আসার সময়েও ল্যুভরে দেখার বিস্ময় বোধের রেশটুকুকে ধরে রাখে ল্যুভরের এই Cour Marly সংগ্রহ।