প্যারিসের পথে পথে – নয় (The Panthéon, Latin Quarter, Paris)

প্যারিস পৃথিবীর এমন একটি শহর, যার প্রতিটি গলির মোড়ে, প্রতিটি স্থাপত্যের গায়ে গায়ে মানুষের হাজার বছরের সুক্ষ রুচি, শিল্পবোধ, রোমান্টিকতা, গল্প, ম্যাজিক, ঐতিহাসিকতা জড়িয়ে আছে। প্যারিস শহরটিকে যে যেমন করে চায় আবিষ্কার করতে পারে – প্যারিস শহরটিকে প্রত্যেকেই নিজের মতো করে জানতে পারে, দেখতে পারে। এই শহরটির পরতে পরতে কতো যে রূপ লুকিয়ে আছে – একে কেউ জানে ফ্যাশন দিয়ে, কেউ জানে শিল্প দিয়ে, কেউ জানে জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে, কেউ জানে স্থাপত্য দিয়ে, কিংবা কেউ শুধু এমনিতেই প্যারিসকে জানে। আর সেই প্রত্যেকটি জানাই যেন এক আশ্চর্য রহস্য উদ্ঘাটনের আনন্দ দেয়, শিল্পীদের দেয় প্রেরণা। শুনেছি, প্রত্যেক শিল্পীই নাকি দুই জায়গার বাসিন্দা হয় – এক, সে যেখানে থাকে, আর দুই – অবশ্যই প্যারিস।

আমাদের এক ফরাসী বন্ধু বলেছিল – প্যারিসকে সত্যি করে জানতে হলে সারা জীবনও বোধহয় কম হয়ে যায়। অদ্ভুত এই শহর।

আর প্যারিসের ম্যাপ হাতে নিয়ে, হাজার গলি, রাস্তার জট দেখে বন্ধুটির কথাই সত্যি বলে মনে হয়। আর, প্যারিসের নানান গলি, নানান রাস্তা ধরে প্যারিসকে আবিষ্কারের নেশায়, দেখার আনন্দে বেড়িয়ে পড়তে হয় – ঐতিহাসিক রাস্তা গুলো নিয়ে আসে প্যারিসের বিখ্যাত The Panthéon এর সামনে।

আঠারো শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফরাসী রাজা লুই পনেরো, অসুস্থ হয়ে পণ করেছিলেন, যদি তিনি সুস্থ হয়ে যান, প্যারিসের ছোট্ট মঠ The Abbey of St Genevieve কে এক বিশাল অট্টালিকায় পরিণত করে দেবেন। যথারীতি রাজা সুস্থ হয়ে উঠলে আঠারো শতাব্দীর মাঝামঝি সময়ে এই প্যারিসের বুকে বিশাল এই অট্টালিকা তৈরির কাজ শুরু হল।

এই অট্টালিকা তৈরির কাজ তো শুরু হয়েছিল, কিন্তু, সেই সময়ে ফরাসী অর্থনীতি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাই, খুব ধীর গতিতেই কাজ চলছিল। তারপর প্রায় ত্রিশ বছর পরে যখন এই অট্টালিকা তৈরির কাজ শেষ হল, ফরাসী বিপ্লবের আগুন তখন সবে ধরতে শুরু করেছিল। সেই দিক দিয়ে এই অট্টালিকার ভাগ্য ভালোই বলতে হয় – কারণ সেই সময় ফরাসী বিপ্লবের মুখে বহু অট্টালিকা ধ্বংস হয়েছিল। বর্তমানে, নিও ক্লাসিক্যাল যুগের স্থাপত্যের নমুনা হিসাবে এই স্থাপত্য প্যারিসের এক গর্ব, এক অলংকার।

উনিশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফরাসী বিজ্ঞানী, Foucault, এই Panthéon এর ভেতরে সেন্ট্রাল গম্বুজের নীচে, পৃথিবীর আবর্তন বোঝানোর জন্যে Foucault pendulum তৈরি করেন। অবশ্য, তিনি যে পেন্ডুলাম দিয়ে প্রদর্শন করেছিলেন সেটা মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে।  আবার, বিংশ শতাব্দীতে রোডিনের বিখ্যাত স্ট্যাচু  The Thinker   ও এখানে স্থান পেয়েছিল।

যদিও প্রথম দিকে এই স্থাপত্য এক চার্চ হিসাবেই ব্যবহার হত, কিন্তু, বর্তমানে এই Panthéon প্যারিসের এক ধর্মনিরপেক্ষ সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের স্মৃতি সৌধ এখানে স্থান পেয়েছে। Panthéon  এ ঢোকার মুখেই ফরাসী ভাষায় ফ্রান্সের সেই মহান মানুষ গুলোর জন্যে লেখা – To great men, the grateful homeland । ফ্রান্সের সেই মহান মানুষ, যাদের কাজ ফ্রান্সকে সম্বৃদ্ধ করেছে – তাদের কাছে ফ্রান্স কৃতজ্ঞ, আর তাদের স্মৃতি সৌধ ফ্রান্সের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ।

প্যারিসের পথে পথে – আট

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s