সুইস নদী (The Aare, Switzerland)

সুইস রাজধানী শহরকে Aare নদী যেন ঠিক এক পান্নার নেকলেসের মতো জড়িয়ে ধরে। শহরের নানা জায়গা থেকে এই অদ্ভুত সবুজ ফিরোজা নদী টুরিস্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আল্পসের Bernese পাহাড় শ্রেণীর কোল থেকে উৎপন্ন হয়ে, স্রোতের সঙ্গে আল্পসের লাইমস্টোনের টুকরো নুড়ি বয়ে আনতে গিয়ে এই নদীর রং হয়ে যায় – পান্না সবুজ।

আর, সুইজারল্যান্ডের দীর্ঘতম এই নদী যা কিনা সুইজারল্যান্ডের নানান জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, সুইজারল্যান্ডেই Rhine নদীতে এসে মিলিত হয় – তাই এই নদীই সুইজারল্যান্ডের নিজস্ব নদী – সুইস নদী। প্রায় তিনশো কিলোমিটারের কাছাকাছি দীর্ঘ এই পাহাড়ি নদীর বুকে চল্লিশটিরও বেশী জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে।

সুইজারল্যান্ড ও সুইস রাজধানী শহর চারিদিক থেকে পাহাড় ও স্থলভূমি দিয়ে ঘেরা, আর সামারের গরমে তাই এই নদী বার্ন বাসীর সমুদ্র তীরের স্বাদ অনেকটাই মিটিয়ে দেয় – এই নদীর বুকে টুরিস্ট সহ বার্ন বাসীরা গা ভাসাতে পারে। সত্যিই, আক্ষরিক অর্থেই গা ভাসাতে হয় – কারণ এই খরস্রোতা নদীতে সাঁতার কাটা যায় না, শুধু স্রোতে ভাসতে হয়। তবে, এই সুইস নদীতে গা ভাসাতে হলে পাকা সাঁতারু হওয়াটা খুবই জরুরি।

সাধারণত, লোকেরা নদীর পাশ দিয়ে উপরের দিকে হেঁটে গিয়ে, জলে নেমে, শুধু স্রোতে ভাসে। ইউরোপে নদীতে সাঁতার কাটার দৃশ্য বিরল, তাই সামারের সময় বার্নের Aare নদীতে আল্পসের বরফ গলা জলে গা ভাসাতে – জীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্যে বহু টুরিস্ট বার্ন শহরে ভিড় করে –  শুনেছি, তখন এই নদীকে ঘিরে রীতিমত এক মেলা বসে যায়।

অবশ্য, আমরা যে সময়ে Aare  কে দেখলাম – ফেব্রুয়ারির মেঘলা দিনে আকাশ ছিল ঘন ধূসর মেঘের আড়ালে, পান্না সবুজ নদীর বুকে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটারা মিলিয়ে যাচ্ছিল – সুইস নদী তখন বৃষ্টির জলে আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছিল।    আর সেতুর উপর থেকে নদী ও শহরের অপূর্ব দৃশ্য এক অদ্ভুত সুন্দর ছবি তৈরি হচ্ছিল। আর, বার্নের কাছে এসেই এই সবুজ নদী এক বাঁক নেয় – তাই বার্নের কাছে এই নদীর সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে যায়।

আর, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, ফেব্রুয়ারির সেই বিকেলে সেতুর উপরে হাঁটতে হাঁটতে সেই অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইলাম – পৃথিবীতে নদী বয়ে যাবে, এই জায়গায় আরও লক্ষ কোটি মানুষ এসে দাঁড়াবে, কিন্তু, আমরা যে মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে গেলাম, সেই মুহূর্ত তো আর ফিরবে না। আর সেই মুহূর্তের ম্যাজিকই বোধহয় জীবনের গল্প, নদীর গল্প – একমুখী এক স্রোতের নাম নদী, জীবন।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Switzerland, Travel, Western-Europe and tagged , , , . Bookmark the permalink.

5 Responses to সুইস নদী (The Aare, Switzerland)

  1. চমৎকার ! নয়নাভিরাম !

  2. indranilmutsuddi74 বলেছেন:

    Well written…delighted to read the article.. Double Thumps up

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s