প্যারিসের পথে পথে – আট (Notre-Dame de Paris)

সোনালি ভোরের অদ্ভুত নরম আলো ছড়িয়ে পড়ছে এই শহরের উপরে। শীতে জড় সকাল ধীরে ধীরে কুয়াশার পর্দা সরিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। প্যারিসের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার তাড়া এখনো শুরু হয় নি। ভোরের ভেজা ভেজা হালকা কুয়াশা ঘেরা প্যারিসের পথে হাঁটতে হাঁটতে Notre-Dame ক্যাথিড্রালের সামনে এসে মুগ্ধ হয়ে থমকে যাই। ভোরের মায়াবী আলোয় কি অপূর্ব সোনা রঙ ধরেছে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য।

এই শহরের প্রতিটি স্থাপত্যের গায়ে এক একটি গল্প জড়ানো, ইতিহাসের নানা সময়ের উত্থান পতনের সাক্ষী এই শহর ও তার স্থাপত্য। প্যারিসের অপূর্ব সুন্দর Notre-Dame ক্যাথিড্রাল দেখেছে ফরাসী বিপ্লব, দেখেছে দু’ দু’টো বিশ্ব যুদ্ধ – তবুও এখানের মানুষ এই স্থাপত্যের সুক্ষ সৌন্দর্যে, কারুকার্যে এক বিন্দু আঁচ পড়তে দেয়নি।

ফরাসী বিপ্লবের সময়ে এই ক্যাথিড্রাল মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু, ফ্রেঞ্চ গথিক আর্কিটেকচারের নিদর্শন ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চার্চ বিল্ডিং এর নমুনা এই ক্যাথিড্রাল, স্থাপত্য শিল্পীদের বহু অধ্যবসায় ও যত্নের ফলে ফিরে পায় পুরনো সৌন্দর্য, গৌরব। বিশেষজ্ঞরা বলে, যদিও ফ্রেঞ্চ গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন, কিন্ত তৈরির সময়ের ছাপ, রেনেসাঁ যুগের ছাপ এই চার্চের গায়ে স্পষ্ট।
প্রতি বছর জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর নানা জায়গার মানুষ এখানে শুধু একবার Notre-Dame de Paris ক্যাথিড্রালকে দেখতে আসে, এর স্থাপত্যে বিমোহিত হতে ফিরে আসে। বারো শতাব্দীতে শুরু হয়ে প্রায় তিনশো বছরে এই চার্চের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন এই ক্যাথিড্রালকে কেন্দ্র করে ভিক্টর হুগো লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস The Hunchback of Notre-Dame । সেই সময়ে পুরনো গথিক স্থাপত্যকে অবহেলাই করা হত, এর ঐতিহাসিক মুল্য না বুঝে পুরনো সরিয়ে নতুন স্থাপত্য তৈরি করা হচ্ছিল, এমনকি Notre-Dame de Paris এর কিছু কিছু অংশ নতুন করে তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা কালজয়ী সেই উপন্যাস পড়ে বা চলচিত্র দেখে অনেকেই হয়তো Notre-Dame de Paris কে দেখার ইচ্ছা রাখে, আমিও অবচেতন মনের কোন এক কোণে রেখেছিলাম সেই ইচ্ছা।

দূর থেকে প্যারিসের গৌরব এই ক্যাথিড্রাল দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। কাছে এসে ক্যাথিড্রালের গায়ের কারুকাজ, বিশাল গথিক রোজ উইন্ডো, দরজার গায়ের কারুকাজ দেখতে দেখতে ভেতরে গিয়ে নির্জন, ঠাণ্ডা, শান্ত এক পরিবেশের মুখোমুখি হই। এখানে সকাল শান্ত ভাবে সারা দিনকে স্বাগত জানায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s