জুলাইয়ের ঝকঝকে সোনালি দিনে ইস্তনিয়ার তালিনে দিনের শুরুতেই তালিনের ম্যাপ দেখিয়ে যখন হোটেলের রিসেপশনের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম – ‘আচ্ছা, শুনেছি এখানে এই সময় লিলি ফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যাল হয়, কি করে যাব সেখানে?’
ছেলেটি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল, যেন আকাশ থেকে পড়ল। বলে কি এই দুই বেদেশি। মাথা চুলকে বেশ লজ্জায় পড়ে গিয়ে বলল – এখানে লিলি ফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যাল হয়? জানি না তো?
যাইহোক, আমি তো জেনে এসেছিলাম সামারে তালিনে লিলি ফেস্টিভ্যাল হয়। ইউরোপের সমস্ত ল্যান্ডস্কেপ আর্টিস্ট, হর্টিকালচারিস্টরা এখানে এসে ফুলের প্রদর্শনী করে। মারাত্মক ঠাণ্ডার পরে উষ্ণ দিনে ফুল বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে ফুল বাগানের প্রতি উৎসাহিত করে তোলে এই উৎসবে। এখানে মানুষ জেনে নিতে পারে বাগান করার নানান গোপন তথ্য, পদ্ধতি, টোটকা, কারিকুরি।
আসলে, বাল্টিক অঞ্চলের দেশ ইস্টনিয়ার রাজধানী তালিন তো রোম, প্যারিস বা ভেনিসের মত জনপ্রিয় টুরিস্ট গন্ত্যব্য নয়, তবে ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে এই শহরের ঐশ্বর্য যেন এক গুপ্তধনের ভাণ্ডার। রাশিয়ার ছাপ বহু পুরনো এই শহরের আনাচে কানাচে। ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান টুরিস্ট যদিও বা এখানে সামারে বেড়াতে আসে, কিন্তু এশিয়ার টুরিস্ট খুব বেশী চোখে পড়ে না। আর ট্যুরিজম এখনো তেমন জাঁকালো হয় নি এই অঞ্চলে, তাই সকাল সকাল তালিন ওল্ড সিটি সেন্টার বেশ ফাঁকা ফাঁকা।
এই শহর Toompea পাহাড়ের উঁচু অংশের দিকে বিস্তার করেছিল, ঐ অঞ্চলেই সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্য। পাথুরে গলি পথে হেঁটে যেতে যেতে দেখি এই শহরের মানুষ ও জীবন। চার্চের সামনে এক স্যুভেনিরের দোকান সবে খুলছে, দোকানি মেয়েটি খুবই যত্নের সঙ্গে সাজিয়ে রাখছে তালিনের স্যুভেনির। পথে এঁকে ওকে জিজ্ঞেস করে পৌঁছে গেলাম লিলি ফ্যাস্টিভেলের প্রাঙ্গনে। ঐতিহাসিক দুর্গ ঘেরা বাগানে এই ফেস্টিভ্যাল হয়।
ফুল যেখানেই ফুটুক না কেন, সেই জায়গার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে হাজার গুণ। ঐতিহাসিক দেওয়ালের প্রাঙ্গনে সুন্দর দিনে সূর্যকে সাক্ষী রেখে হাজার ফুলের ফুটে ওঠা জীবনকে বড়ই আশাবাদী করে দেয়, ভালো লাগে।
দিন তো সবে শুরু, এগিয়ে যাই শহরের অন্য দিকে, হাঁটি ঐতিহাসিক তালিনিন শহরের গলি পথ ধরে। আমি জানি, এই পথে আমার আগেও অনেকে হেঁটে গেছে, আমার পরে আরও অনেকে হাঁটবে, কিন্তু আজকের আমার এই পথ চলা যে একান্তই আমার নিজের, নিজস্ব এক অনুভূতি। আর সেই নিজস্ব পথ চলার অনুভূতিকে মনে স্থান দিয়ে আরও পথ চলার অঙ্গীকার করি।