প্রায় চারশো বছর আগে ফ্রান্সের রানী Marie de’ Medici র তৈরি প্যারিসের এই বাগান Jardin du Luxembourg আজও জন কোলাহলে ভরপুর – অতীত সময় যেন তার ছাপ ফেলে যেতে ভুলে গেছে এখানে। হাসি আনন্দে, খেলায় সমান উজ্জ্বল এই বাগান। আজও সমান যত্নে সাজানো বাগানের প্রতিটি কোণা, প্রতিটি মরশুমি ফুলের বিছানা, ছাঁটা হয় প্রতিটি গাছের ডগা। আজও সামারে ফুলে ফুলে উজ্জ্বল হয় এই বাগানের ছবি।
সামারের উজ্জ্বল দিনে প্যারিসবাসীর এক প্রাণচঞ্চল আখড়া এই বাগান। উজ্জ্বল হালকা শীতে নরম রোদ পিঠে নিয়ে প্যালেসমুখী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যে কোন এক চেয়ার নিয়ে বসে বাগানের সবুজ মাঠ, উজ্জ্বল নানা রঙের ফুলের দিকে তাকিয়ে সময় উড়ে যায় – চিন্তাহীন।
সামারের শেষে শীতের শুরুতে হলুদ লাল ঝরা পাতা বাগানকে করে তোলে স্বর্ণোজ্জ্বল, স্বপ্নময়। হলুদ লাল ঝরা পাতার পথ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে হতেই পারে ইতিহাসের পাতার কত নায়ক নায়িকা এই পথে হেঁটেছিল, বৈকালিক ভ্রমণের পথে Ernest Hemingway বাগানের ঐ চেয়ারে বসে চিন্তা করেছিল, সৃষ্টি করেছিল সাহিত্যের ইতিহাস। আর আজ আমরা সেই পথে হেঁটে রোমাঞ্চিত হই।
ডিসেম্বরের তুষার ঝরা শীতে জমাট বাঁধে এই বাগানের মাঝ পুকুরের জল, পথ হারা সিগাল ও বুনো হাঁসেরা সাঁতার কাঁটা ভুলে জমাট বরফের উপরে চলাফেরা করে। বাগানের প্রতিটি বড় গাছ হয়ে যায় – নিঃস্ব রিক্ত, মরশুমি ফুলের বেড গুলোর ঝুরো মাটি পড়ে থাকে – শুষ্ক। পুরো বাগানটি ধূসর এক চাদর জড়িয়ে থাকে, এই পথে তখন খুবই কম মানুষের আনাগোনা।
তবে, বাগানের স্ট্যাচু গুলো সমান ভঙ্গিতে গ্রীবা বাঁকিয়ে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে – শীতের সকালে তাই বাগানময় ওদের উপস্থিতি অনুভব করি, ঐ বাগানে একা বোধ হয় না। বাগানের নানা জায়গায় পাথরের স্ট্যাচু প্যারিসের বাগানের এক বৈশিষ্ঠ। এই বাগান ও প্রাসাদ রানী Marie de’ Medici ইতালির Pitti Palace এর অনুকরণে তৈরি করিয়েছিলেন।
হোক না বছরের যে কোনও সময়, প্যারিসে পা রাখলে এই বাগানের গাছের মাঝের স্বপ্নময় রাস্তায় এক বার না হাঁটলে, Luxembourg প্যালেসের দিকের বেঞ্চে রোদে পীঠ রেখে একবার না বসে এলে যে প্যারিসের অনেক কিছুই বাদ রয়ে যায়। তাই, প্যারিসবাসীর সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর টুরিস্টেরও এই পথে আসা যাওয়া।