এক স্বপ্ন প্রাসাদের গল্প ( Palace of Versailles, France)

পৃথিবীতে মানুষ আসে বাঁচে, আর পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার অস্তিত্ব রেখে যায় কিংবা রেখে যাওয়ার চেষ্টা করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে। যত বড় মাপের মানুষ তত বড় তাঁর সৃষ্টির প্রসার, দূর দৃষ্টি, স্থায়িত্ব। শুধু কি সাধারণ মানুষই চেষ্টা করে? কত রাজা মহারাজাও তো পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করে গেছে, কিন্তু, ক’জন রাজাকেই বা শত শত বছর ধরে মানুষ মনে রাখে, তাঁর রাজ প্রাসাদ দেখতে দূর দূর থেকে আসে? কত রাজ প্রাসাদই তো ভগ্ন প্রাসাদ হয়ে পড়ে থাকে – সাপ খোপ ঘর বাঁধে, রাজবংশ লোপ পায়, কালের চক্রে তাঁর নিজের দেশের মানুষই ভুলে যায় রাজার কীর্তি – আর সেই অস্তিত্বহীনতার ভয় বুঝি বা ফ্রান্সের রাজা লুই XIV এর মনে ছিল।

তাই সাতাশ বছর বয়সের নবীন, অহংকারী, আত্মম্ভরি রাজা লুই XIV এই পৃথিবীর বুকে এক স্বপ্ন প্রাসাদ তৈরি করার স্বপ্ন দেখে, পৃথিবীর বুকে এক আশ্চর্য, মহান সৃষ্টি হবে সেই রাজপ্রাসাদ, যার ভেতরের ঐশ্বর্য, বাগানের সৌন্দর্য দেখে মানুষের তাক লেগে যাবে। যুগ যুগ ধরে ফ্রান্সের মানুষ তাঁর এই কীর্তির কথা স্মরণ করবে, এই প্রাসাদের সঙ্গে সঙ্গে লুই XIV এর নামও উজ্জ্বল থাকবে ফ্রান্সের ইতিহাসের পাতায়।

ঠিক হল, প্যারিস থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে জল জঙ্গল, মশা, পোকামাকড়ে ঘেরা এক জায়গা, যেখানে আগে লুই XIV এর বাবা শিকারে যেতেন, সেখানে সেই রাজপ্রাসাদ তৈরি হবে। সেই জঙ্গলে ঘেরা জায়গায় আগেই লুই XIV এর বাবার এক হান্টিং লজ ছিল, লুই XIV সেটাকে ঘিরেই নিজের রাজপ্রাসাদ বিস্তারের স্বপ্ন দেখল। তাঁর স্বপ্নে ইন্ধন যোগান দিল – সেই সময়ের ফ্রান্সের বিখ্যাত স্থাপত্য শিল্পী Louis Le Vau, বিখ্যাত ল্যান্ডস্কেপ আর্টিস্ট André Le Nôtre।

চল্লিশ হাজার মানুষ দিনে রাতে কাজ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজার স্বপ্ন প্রাসাদকে বাস্তব রূপ দিয়েছিল। ভারসেই প্রাসাদের প্রেমে রাজা এতো ডুবে ছিল, যে সমস্ত রাজ দরবার ভারসেই প্রাসাদেই নিয়ে চলে এসেছিল। এই প্রাসাদের প্রতিটি দেওয়ালের ছবিতে, কাঁচের ঝালর বাতিতে, সোনালি মোম দানিতে, দেওয়ালের রঙে, জানালার কাঁচে লুই XIV এর স্বপ্ন প্রকাশ পেয়েছে। প্রাসাদের কাজ চলাকালীন রাজা নিজে প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন।

ফ্রান্সের ইতিহাসের অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী এই প্রাসাদ। সেই সময়ে দেনায় ডুবে যাওয়া ফ্রেঞ্চ রাজ দরবারকে বাঁচাতে এই প্রাসাদের অনেক রূপোর জিনিস গলানো হয়েছিল। আজও, এই প্রাসাদের উপার্জন, ফ্রান্সের অর্থনীতির এক স্তম্ভ বলা যেতে পারে। প্রতিদিনের ভিড় সামলাতে ভারসেই প্রাসাদ কতৃপক্ষ হিমশিম খায়। আজও প্রাসাদের প্রতিটি কোণা সমান যত্ন পায়। নিজের দেশের ঐশ্বর্যকে কি ভাবে সত্নে সামলে রাখতে হয় ফ্রেঞ্চরা সেটা খুব ভালো জানে।

খুব সকালেই ভারসেই প্রাসদের দরজায় পৌঁছে গেলেও দেখি প্রচণ্ড লম্বা লাইন। ভেতরে ঢুকতে অন্তত দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বাঁধা। ফ্রান্সের মানুষের এক অহংকার এই প্রাসাদ, ওরা বলে লুই XIV সতেরো শতকের মহান রাজা ছিলেন, যিনি শুধু বড় প্রাসাদই তৈরি করেন নি, রাজা তাঁর জীবনকালের মধ্যে ফ্রান্সের মানুষের জন্যে এক অস্তিত্ব রেখে গেছেন। যাকে ফ্রেঞ্চরা আজও মনে রেখেছে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

2 Responses to এক স্বপ্ন প্রাসাদের গল্প ( Palace of Versailles, France)

  1. sarasijdas বলেছেন:

    Chobi-gulo darun .. Versailles niye apnar lekha-tao khub pranobonto…………..Versailles-r naam sunlei Marie Antoinette-r kotha mone pore ……….ar mone pore ‘ruti pachhe na to Cake khachhe na keno!!!’

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s