কোপেনহেগেনের বিখ্যাত রাজপথ Strøget ধরে হাঁটতে হাঁটতে সিটি সেন্টারের অন্যতম বিখ্যাত স্কোয়ার ‘Amagertorv’ এর দিকে যাওয়ার সময় দূর থেকেই এক বাজনার সুরেলা সুর কানে আসছিল। অক্টোবরের ধূসর মেঘলা ঠাণ্ডা দিনে, তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নামার বিষণ্ণতা ছাপিয়ে সুর পৌঁছে যাচ্ছিল পথচারীদের কানে, আর সেই বাজনার সুর যেন উপস্থিত সবাইকে বেশ উৎফুল্লই করছিল, পরিবেশটাকে বেশ মাতিয়ে তুলেছিল সেই সুর।
কোপেনহেগেনের একদম হৃদয়ে এই সিটি সেন্টারটির চারদিক নানান স্থাপত্য দিয়ে ঘেরা, তাই মনে হয়, শীতের শেষ বিকেলে জায়গাটার মধ্যে এক উষ্ণ আরামদায়ক ব্যাপার আছে। ঠাণ্ডার প্রকোপ যেন অনেকটাই কম।
এই স্কোয়ার কোপেনহেগেন শহর কেন্দ্রের এক ব্যস্ত অঞ্চল – হ্যালুইনের ছুটি ও শপিং এর আনন্দে অনেকেই মশগুল। কোপেনহেগেন শহরের সমস্ত ছোট বড় রাস্তা বা গলি যেন এই স্কোয়ার থেকেই শুরু হয়েছে, আবার এখানে এসেই মিশেছে। তাছাড়া, এই স্কোয়ার কোপেনহেগেনের বিখ্যাত বড় রাস্তা ‘Strøget’, এর এক অংশও বটে।
কোপেনহেগেনে এই স্কোয়ারের উপস্থিতি সেই মধ্যযুগ থেকে, যখন কোপেনহেগেন জেলেদের এক ছোট্ট গ্রাম ছিল, তখন এই স্কোয়ার দিয়ে জেলেরা সমুদ্র তীরে যাতায়াত করতো। আর বেশ কয়েকশো বছর ধরে এই স্কোয়ারে স্থানীয় বাজার বসতো, তাছাড়া, তখন উৎসব অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই স্কোয়ার।
এমনকি, এই স্কোয়ারের নামকরণও সেই Amager কৃষক, যারা নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে এই স্কোয়ারে এসেছিল, তাদের নামে হয়েছে। তারপর তো গত কয়েকশো বছর ধরে কোপেনহেগেন এক বড় শহরে পরিণত হয়েছে, কিন্তু, এই স্কোয়ারের ধরণ, আকার সব একই আছে, শুধু সেই স্থানীয় বাজার আর বসে না। তবে, এই স্কোয়ারকে ঘিরে প্রচুর রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।
স্কোয়ারের একদম মধ্যে, এক অদ্ভুত ফোয়ারার উপস্থিতি নজর কেড়ে নেয় – Stork Fountain। ফোয়ারার নীচে কয়েকটা সারস পাখি ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে স্তব্ধ হয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের নানান স্কোয়ারে নানা ধরণের ফোয়ারার দেখা মেলে, কিন্তু, এই ধরণের ফোয়ারা ইউরোপে অদ্বিতীয়। এই ফোয়ারাকে ঘিরেই যেন কোপেনহেগেনের এই বিখ্যাত স্কোয়ারের জনজীবন স্পন্দিত হয়। যে কোন ঘটনার প্রতিবাদ থেকে শুরু করে, টুরিস্টদের দিগ্নির্দেশ সবই এই স্কোয়ারের এই সারস-ফোয়ারাকে ঘিরে।
শীতের মেঘলা দিনে সন্ধ্যা খুবই তাড়াহুড়ো করে নেমে যায়, কিন্তু, এই স্কোয়ারের চারপাশের দোকান গুলোও সঙ্গে সঙ্গে ঝলমল করে ওঠে। উত্তর ইউরোপের এই দেশে সন্ধ্যার রং যত গাঢ় ধূসর, বিদ্যুত আলোর ততোই জমক, ততোই উজ্জ্বলতা। ততোই আলোর উৎসব। আবার, সব আলো, সব অন্ধকার, সব রোশনাইকে পেছনে রেখে সামনের ঐ দীর্ঘ পথ ধরে আবার এক নতুন গন্ত্যব্যের খোঁজে শুরু হয় পথ চলা – ভ্রমণ তো মানুষকে তাই শেখায়।