বহু প্রাচীন এক শহর ঘিরে সুরক্ষার জন্যে তৈরি হয়েছিল এক দুর্গ প্রাচীর, গড়ে উঠেছিল মানুষের বসতি – আর আজও সেই প্রাচীন শহরে মানুষের বসবাস, টুরিস্টের আনাগোনা, মানুষের ভ্রমণ বিলাস, ঐতিহাসিক বিস্ময়। তাই, ইউনেস্কো পুরনো তালিনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। আর সেই প্রাচীন শহরে এসে এক অদ্ভুত অনুভবে, রোমাঞ্চে, ভালো লাগায়, বোধহয় অনেকেই আক্রান্ত হয়।
এ এক বিচিত্র জায়গা, শেষ বিকেলের গাড় হলুদ আলো যদিও দুর্গ প্রাচীরের চূড়ায়, শহরের ভেতরে প্রাচীরের ছায়ায় কিন্তু সন্ধ্যার ধূসরতা ঘনিয়েছে। প্রাচীন সরু গলিপথ ধরে হেঁটে এই শহরের স্থাপত্য, মানুষের বসবাসের ঝলক দেখাই এখানে ভ্রমণের অঙ্গ। সরু গলিপথের এক পাশে প্রাচীন দুর্গ প্রাচীরের দেওয়াল, এক দিকে বসতি – পুরো পুরনো শহরটির মধ্যেই এক আরামদায়ক, সুরক্ষিত ভাব। তাছাড়া, জুলাইয়ের আবহাওয়াও এখানে চমৎকার, মনোরম, নাতিশীতোষ্ণ।
এই শহরে নাকি পাঁচ হাজার বছর আগের মানুষের বসবাসের চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে, আর এগারো শতাব্দীতে এই শহরে প্রথম দুর্গ তৈরি হয়েছিল। প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবসা বানিজ্যের অনুকূল ভৌগলিক অবস্থানের জন্যে এক সময়ে তালিনের খুবই সম্বৃদ্ধি হয়েছিল। এক দিকে বাল্টিক সমুদ্রের বাহু Gulf of Finland ও একদিকে রাশিয়ার উপস্থিতি – সব মিলিয়ে উন্নতি ও সম্বৃদ্ধির শিখরেই ছিল এই শহর, এমনকি বর্তমানেও আধুনিক তালিন global city র তালিকায় আছে, ও পৃথিবীর প্রথম দশটি স্মার্ট সিটির মধ্যে তালিনের নাম পাওয়া যায়। এখানে আধুনিক ও ঐতিহাসিক সময়ের অদ্ভুত সহাবস্থান।
তবে, তালিনকে কি খুব বেশী আন্তর্জাতিক টুরিস্ট কেন্দ্রিক শহর বলা যায়? মনে হয় না, কারণ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার টুরিস্টদের ভ্রমণ তালিকায় তালিনের নাম বোধহয় সবচেয়ে শেষের দিকেই আসে – তাই, এখানে সন্ধ্যায় টুরিস্টের ভিড়ে খুব বেশী আন্তর্জাতিক মুখ খুঁজে পাই না। তবে জাপানি টুরিস্টের দেখা অবশ্যই পাওয়া যায়, শুনেছি জাপানিরা খুবই বেড়াতে ভালোবাসে।
যাইহোক, বিকেল শুরুর মুখেই এখানে পৌঁছে, শহর কেন্দ্রের গলিতে হেঁটে যতটুকু পারা যায় দেখে নিতে ঐতিহাসিক আবছায়া গলি পথ ধরে এগোই।