এপ্রিলের শেষে মাঝ দুপুরে রোমের প্রাচীন পাথুরে গলিপথ গুলো রীতিমত তেতে ওঠে, ইস্টারের ছুটি পড়েছে তাই টুরিস্টের স্রোতের বিরাম নেই – ইতালির রুক্ষ গরমে তেতে ওঠে ঐতিহাসিক বিখ্যাত রোমান এম্ফিথিয়েটার কলোসিয়ামের ভগ্ন পাথুরে দেওয়াল গুলোও।
রোমের ইতিহাসের উত্থান ও শৌর্যের সময়ের তৈরি বিশাল এই এম্ফিথিয়েটার পৃথিবীর এক আশ্চর্য ঐতিহাসিক স্থাপত্য – অনুমান করা হয় এক সময়ে এই এম্ফিথিয়েটারে এক সঙ্গে পঞ্চাশ থেকে আশি হাজার দর্শক এক সঙ্গে বসতে পারতো। আজও প্রচুর মানুষ এখানে প্রাচীন সময়ের খোঁজে ফিরে আসে – রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত টুরিস্ট আকর্ষণ, রোমের এক প্রতীক। রোমে এসে কলোসিয়াম না দেখা রীতিমত অন্যায়। মানুষ এখানের ভগ্ন দেওয়ালের খাঁজে খাঁজে অতীতের থমকানো সময়ের খোঁজ নেয়, ঘুরে বেড়ায়, অবাক হয়।
যদিও রোমের এই কলোসিয়াম এককালের রোমানদের হিংস্র খেলার চিহ্ন বহন করে, কিন্তু, এখন রীতিমত আধুনিক ব্যস্ত জায়গা। বিকেলের দিকে ইস্টারের প্রোগ্রামের জন্যে দুপুর দু’টোর মধ্যেই কলোসিয়াম বন্ধ হয়ে যাবে – তাই সকাল থেকেই টুরিস্ট উপছে পড়েছে, ভেতরে ঢোকার জন্যে সর্পিল লাইন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে।
যাইহোক, স্যুভেনির সংগ্রহকারীরা কিন্তু, এই ঐতিহাসিক কলোসিয়ামকে ছাড়ে নি, এক সময়ে নিজের সঙ্গে কলোসিয়ামের এক টুকরো স্মৃতি নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেকেই কলোসিয়ামের দেওয়াল ভেঙ্গে পাথর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো, এমনকি রাতের অন্ধকারেও হানা দিত – এখন অবশ্য চারিদিকে ক্যামেরার চোখ কড়া পাহারা দেয়।
ইতিহাসকে বর্তমানে সামিল করে নিতে বোধহয় আর অন্য কোন শহর রোমের চেয়ে বেশী জানে না, সন্ধ্যার দিকে কলোসিয়াম চত্বরে শুরু হল ইস্টারের অনুষ্ঠান, আসলে কলোসিয়ামের সঙ্গে রোমান ক্যাথোলিক চার্চের খুবই কাছের সম্পর্ক।
যে কলোসিয়াম রোমান অহংকারের প্রতীক ছিল, আজ তাঁর ভগ্ন দশা, তবুও পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই এম্ফিথিয়েটার আজও রোমান ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার পরিচয় বহন করে চলে, হাজার বছরের পুরনো স্থাপত্য আশ্চর্য জনক ভাবে আজও মজবুত দাঁড়িয়ে আছে। আবার, এই স্থাপত্য বহন করে চলে মানুষের নিষ্ঠুরতার কাহিনী, এর দেওয়ালের প্রতিটি পাথরে যেন গ্ল্যাডিয়েটরদের বীরত্ব, রক্ত, ঘামের গন্ধ গাঁথা। তখন তো, রোমানদের অন্যতম বিনোদন বা খেলাই ছিল রক্ত ঝরা দেখা, যুদ্ধ দেখা, হিংস্র উন্মত্ত পশুর মত্ততা দেখা। ক্ষুধার্ত রাগী সিংহ বা জন্তুর ক্রুর গর্জনে যে দরবার ছিল আলোড়িত, ভীত, আন্দোলিত আজ সেই জায়গা হাজার হাজার মানুষের ছুটির আনন্দ কোলাহলে ভরপুর, মুখরিত – ইস্টার সন্ধ্যায় কলোসিয়ামের ঐতিহাসিক চত্বরে হাজার মানুষের সেই ভিড়ে মিশে যাই।
What a beautiful & Historic place 😀