প্যারিস শহরের মধ্যে যেন এক বিস্তীর্ণতা, বিশালতা আছে – যুদ্ধে আহত সৈনিকদের জন্যে নিবেদিত বিশাল হাসপাতাল Les Invalides এর সামনে এসে সেই বিশাল বিস্তীর্ণতাকে যেন আরও বেশী অনুভব করা যায় – একদিকে বিশাল চওড়া রাস্তা চলে গেছে সিয়েন নদীর দিকে, আরেক রাস্তা চলে গেছে Les Invalides এর গম্বুজ আকারের চার্চ ও আর্মি মিউজিয়ামের দিকে।
রাস্তার দু’পাশে বিশাল সবুজ মাঠে শীতের দুপুরের নরম আলো ঝুঁকে পড়েছে, তবুও শীতের তীব্রতা এখনো একবিন্দু কমে নি – তাই এই সময়েও সবুজ মাঠের ঘাসেরা কিন্তু এখনো অতি মমতায় শিশির বিন্দুকে বুকে আগলে রেখেছে। শীতের দুপুরের অদ্ভুত হলুদ আলোয় ও হালকা কুয়াশায়, সোনালি গম্বুজ চার্চের চূড়ায় অতীত সময় এখনো যেন থমকে আছে – আর সেই সোনালি গম্বুজ চূড়া দূর থেকেই বহু ভ্রমণ পিয়াসীর নজর কেড়ে নেয়, হাতছানি দেয়, আর শীতের নরম রোদ গায়ে জড়িয়ে নিয়ে, পায়ে পায়ে বহু মানুষ এগিয়ে চলে সেই দিকে।
যুদ্ধে আহত সৈনিকদের হাসপাতাল ও অবসর যাপনের জন্যে ফরাসী রাজা লুই চোদ্দ এই বিশাল বিল্ডিং ‘Les Invalides’ তৈরি করেছিলেন – বর্তমানে এই স্থাপত্য ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিলিটারি মিউজিয়াম। যতই কাছে যাই, বিশাল Les Invalides চত্বরের এক পাশে অপূর্ব গম্বুজ আকারের চার্চের বিশালত্বে যেন ডুবে যাই – ফরাসী বারোক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এই গম্বুজ চার্চ, রোমের সেন্ট পিটারস বাসিলিকার অনুকরণে এই গম্বুজ আকারের চার্চের চূড়া পাতলা সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো – প্রায় দশ কেজি সোনার পাতে মোড়ানো এই ইগ্লিস দে ডোম বা গম্বুজ চার্চের চূড়া।
আসলে এই গম্বুজ চার্চ অনেক নামী ফরাসী যুদ্ধ নায়কদের জীবনের শেষ ঠিকানা, শেষ বিশ্রামের জায়গা – যেমন, এই গম্ভুজ চার্চেই নেপোলিয়ান বোনাপার্ট শেষ বিশ্রাম করছে। গম্বুজ চার্চের একদম মাঝে নেপোলিয়ানের পাথর সমাধি বহু টুরিস্টকে আকর্ষণ করে।
এই বিশাল বিল্ডিঙের এক অংশে ফরাসী আর্মির ইতিহাসের নানান সাজ সরঞ্জাম সাজানো – বাইরে পুরনো দিনের সারি সারি কামান অতীতের ছবি তুলে ধরে – Les Invalides এর বিশাল আঙ্গিনায় ঘুরে ফিরে সব দেখে নিতে নিতে মনে হয়, ফরাসী আর্মিতে তো হাজার সৈন্য ছিল, তারা ফ্রান্সের জন্যে লড়াই করেছে, এক সময়ে তাদের মধ্যে কতো আহত সৈন্যের ব্যথার কাতর আর্তনাদে ব্যথিত ছিল এই জায়গার পরিবেশ, কিন্তু, ইতিহাস কি সবাইকে মনে রেখেছে? মনে হয় – পৃথিবীর ইতিহাস কিছু মুষ্ঠিমেয় মানুষেরই দখলে – কে জানে?