উজ্জ্বল সামারের প্রথম দিন থেকেই মিউনিখের এই বাগানে বসে মিউজিকের আসর। দূর থেকেই শোণা যায় সুর-সঙ্গীত। সামারে হাসি আনন্দে, সুরে, প্রচুর টুরিস্টের পদচারণে সরগরম হয়ে ওঠে এই বাগান। আর, বাগানটিও শীতের সমস্ত ধূসরতা কাটিয়ে সেজে ওঠে নানা রঙের উজ্জ্বল ফুলে।
সতেরো শতাব্দীতে Maximilian – I, ইতালির Renaissance স্টাইলে এই বাগান তৈরি করার উদ্যোগ নেন। এই বিশাল চতুষ্কোণ বাগানের মধ্যেমণি hofgarten temple বা Temple of Diana । আর মন্দিরের আটটি সুদৃশ্য খিলান বা তোরণ থেকে মোরাম বিছানো, ফুলে ফুলে সাজানো আটটি পথ চলে গেছে, পথ গুলো বাগানটিকে আটটি সমান ভাগে ভাগ করেছে। আর একদিকে সুদৃশ্য ফোয়ারা বাগানের দৃশ্যে সৌন্দর্য যোগ করেছে।
আর বিশাল এই বাগান ঘিরে বড় গাছ লাগানো রাস্তায় রোদ্র উজ্জ্বল দিনে আলো ছায়ায় এক মোহ তৈরি হয়, শেষ এপ্রিলে দেখি বড় বড় গাছ গুলোয় আবার গোলাপি ফুলও ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। সামারের প্রথমে এখানের সবুজ পরিবেশে কেমন যেন এক স্নিগ্ধতা ঘিরে থাকে। তাই, মিউনিখের মধ্যমণি এই বাগান গরমের সময় বহু স্থানীয় মানুষ ও টুরিস্টের সময় কাটানোর বা হাঁটার জায়গা।
Hofgarten কে ঘিরে মিউনিখের বিখ্যাত স্থাপত্য গুলো উপস্থিত – একদিকে মিউনিখের ঐতিহাসিক রয়্যাল প্যালেস Munich Residenz, জার্মানির সবচেয়ে বড় সিটি প্যালেস, আরেক দিকে Bavarian State Chancellery বিল্ডিং – বিগত দিনের আর্মি মিউজিয়াম যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তাকে ঘিরে এই স্থাপত্য তৈরি হয়েছে। আর একটু দূরেই আছে ইংলিশ গার্ডেন।
প্রাচীন কাল থেকেই এই বাগানের নক্সা, সৌন্দর্য নাকি নানা ভাবে সাজানো হয়েছিল, নক্সার বদল হয়েছিল বহু বার – সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিউনিখের মানুষ এই বাগানের নানা রূপের সাক্ষী হয়েছে। এমনকি, এখনো প্রতি বছর বাগানের পথ গুলো ভিন্ন ভিন্ন রঙের ফুলে সাজানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধেও এই বাগান ও আশেপাশের বিল্ডিং মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় – এখন সবই ইতিহাস।
উজ্জ্বল ঝলমলে ছুটির দিনে, চারিদিকে নানা রঙের অপূর্ব ফোঁটা ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে, ডায়ানা মন্দির থেকে ভেসে আসা আনন্দের মিউজিকের মাঝে কেই বা ইতিহাসের ধুলি ধূসরিত মলিন পাতা গুলোকে উল্টাতে চায়। সুন্দরের মাঝে পথ চলার আনন্দেই যে এখানে মানুষ আসে, বসে, দেখে, হাঁটে – এতেই তো সুখের বিনিময় হয়, আনন্দ সংক্রামিত হয়। আমরাও সেই উদ্দেশ্যেই পথ চলি, জীবনের চলার পথের নানান ছবিকে উজ্জ্বল রঙেই রাঙিয়ে দেওয়ার প্রয়াস করি।