জীবনই যার বাণী – মহাত্মা গান্ধী (Gandhi Ashram, Gujarat)

মানুষের ইতিহাস, মানুষের স্বাধীনতার ইতিহাস তো রক্তের অক্ষরেই লেখা হয় – বিংশ শতাব্দীর মানুষের তাই ধারণা ছিল। পৃথিবীর নানা দেশের ইতিহাস সাক্ষী – মানুষের স্বাধীনতা ছিল রক্ত পিয়াসী।

মানুষের ইতিহাসের প্রতিটি রক্ত ভেজা পাতায় যখন লেখা হচ্ছিল রক্ত খরচের কথা, মানুষের বর্বর হানাহানির কথা, পশুত্বের কথা, বাহুবলের কথা, শক্তি শালী মানুষের জয়ের কথা, ক্ষমতার জয়, শক্তির জয়ই যখন প্রাধান্য পাচ্ছিল – ঠিক সেই সময়েই ভারতবর্ষে সেই মহান আত্মার প্রকাশ হয়েছিল – মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী।

রবীন্দ্রনাথ যার আত্মার মহানতা দেখে নাম রেখেছিলেন ‘মহাত্মা’, ফরাসী ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক Romain Rolland  যাকে বিংশ শতাব্দীর আরেকজন Christ  হিসাবে অভিহিত করেছিলেন, যার জীবনই ছিল তাঁর বাণী – সেই মহান মানুষের কর্মভূমি ও বাসস্থান আজ গুজরাটের এক মহান টুরিস্ট আকর্ষণ।

শীতের শুখা সবরমতী নদীর নিঃস্ব রুক্ষ উদারতায়, গুজরাটের লাল মাটির ধুলো ওড়ানো উদাসীন রুক্ষ বাতাসে এখনো যেন থমকে আছে বাপুর সেই সহজ সরল অহিংস চিন্তার গুঞ্জন। বাপু যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরের যদিও অতি সাধারণ – ধূসর জীর্ণ দশা, তবুও এখনো এখানে এক টুকরো শান্তির খোঁজ করতে দেশ বিদেশ থেকে মানুষ এসে জমা হয়। আজও একদল অনাথ বাচ্চার ঠিকানা এই আশ্রম, তাদের খেলা ধূলার কোলাহলে পরিপূর্ণ এই আশ্রমের প্রাঙ্গণ।

খদ্দর কাপড়ের হেঁটো ধুতি পড়া, হাতে লাঠি, দেখতে নিতান্তই সাধারণ মানুষটির জীবন দর্শনের মূল কথাটি কি ছিল? যাকে নোবেল কমিটি নোবেল শান্তি পুরষ্কার না দিয়ে আক্ষেপ করেছিল, যার জীবন দর্শন পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষিত মানুষকে নাড়িয়ে দেয় – আমার মনে হয় গান্ধীর জীবন দর্শন শিক্ষিত মানুষের বিবেক, মানুষের অহিংস সত্তার এক দর্শন, বিশ্ব শান্তির এক ঠিকানা।

পৃথিবীকে সমস্ত হিংসা, রক্ত খরচ হতে বাঁচাতে হলে গান্ধীর জীবন দর্শনকে মেনে নিতেই হবে। যখন বয়স অল্প ছিল, গান্ধীর অহিংস নীতিকে ঠিক যেন মেনে নিতে পারতাম না, কিন্তু, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, পৃথিবীর নানা দেশে নানান মানুষের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি, গান্ধীর জীবন দর্শনের উদারতা, গভীরতা, সহিষ্ণুতা, সাহসিকতা – যে কিনা শক্তিমান ব্রিটিশদের সত্তাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

আজ পৃথিবীর নানা কোণের রক্ত খরচের বীভৎসতায়, হিংসায়, সন্ত্রাসে, অসহিষ্ণুতায় পৃথিবী সেই মহাত্মার বড়ই অভাব অনুভব করে। নিরীহ শিশু ও মানুষের রক্তে রাঙা হয়ে ওঠে কতো দেশের ভূমি – বিষণ্ণ হয়ে ভাবি, তাঁর চরকায় যে ধুলোর স্তর জমে উঠেছে – আজকের এই পৃথিবীতে তাঁর সেই অহিংস দর্শনকে ফিরিয়ে আনা যে বড়ই জরুরি।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, Gujarat, India, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

5 Responses to জীবনই যার বাণী – মহাত্মা গান্ধী (Gandhi Ashram, Gujarat)

  1. “জীবনই যার বাণী – মহাত্মা গান্ধী”- দারুন নামকরণ। আর পুর লেখাটিই চমৎকার।
    শুভেচ্ছা জানবেন।

  2. jmsabbagh বলেছেন:

    Fascinating thoughts and pictures.Thank you for visiting my blog.Best regards.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s