অক্টোবরের ধূসর মেঘলা দিনের ধূসর দুপুরে, কণকণে ঠাণ্ডায় স্টকহোমের রাজপ্রাসাদের বিশাল চত্বরের ভিড় দেখেই অনুমান হয়ে যায়, এখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে কোন এক রাজ সমারোহ – স্টকহোম রাজপ্রাসাদের রয়্যাল গার্ড বদলের সমারোহ, যা দেখতে প্রতি বছরে পৃথিবীর নানা কোণের মানুষ এসে জমায়েত হয় এই রাজপ্রাসাদের চত্বরে।
এখানে আকাশের ধূসর মেঘের রং ও রাজপ্রাসাদের পাথুরে রং যেন মিশে গেছে। ইউরোপের অন্যতম বিশাল রাজপ্রাসাদের ধূসর চত্বরের প্রেক্ষাপটে একদল রয়্যাল গার্ডের কুচকাওয়াজ, সঙ্গীত, ড্রাম বাজানোর তাল, সেনাদলের মিউজিক, জমায়েত মানুষ – সব মিলিয়ে এখানে সত্যি যেন ইতিহাসের পাতায় উঁকি দেয় বর্তমান সময়।
রাজা Gustav Vasa ১৫২৩ এ এই রয়্যাল গার্ড তৈরি করেছিলেন। রয়্যাল গার্ডদের রাজপরিবার, ও রাজপ্রাসাদ পাহারা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সময়ে অনেকদিন স্টকহোমের পুলিশ ফোর্স হিসাবেও কাজ করত এই রয়্যাল গার্ডরা। আর আজও প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুর বারোটায় স্টকহোম ক্যাসলের চত্বরে নানান অনুষ্ঠান সহকারে সেই গার্ড বদল অনুষ্ঠিত হয় – এই গার্ড বদলের সময় স্টকহোমের অতীত সময় যেন উঠে আসে, বেশ এক রাজকীয় জমকালো জমজমাট পরিবেশ তৈরি হয়। তাই এই গার্ড বদল দেখা স্টকহোমের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ।
তাই, দুপুর হওয়ার আগেই স্টকহোম ক্যাসলের সামনে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলাম। হিম শীতল উত্তুরে হাওয়া চিরে দিয়ে যায়, তবুও প্রচুর মানুষ উপস্থিত রাজপ্রাসাদ চত্বরে।
এক অল্প বয়সী ইউরোপিয়ান নব দম্পতী, রয়্যাল ক্যাসল ও রঙিন সেনা দলের প্রেক্ষাপটে মধ্যযুগীয় পোশাকে সেজে ছবি তোলার জন্যে ব্যস্ত – তাঁদের মধ্য যুগীয় পোশাক আশাকের আভিজাত্য এই রাজপ্রাসাদের রাজকীয় ধূসর পরিবেশের সঙ্গে দিব্যি মানিয়েছে – তাই ওরাও রয়্যাল গার্ডের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়েছে। যাইহোক, প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় ধরে সেনা দলের কুচকাওয়াজ দেখে সবাই ছড়িয়ে যায় স্টকহোম দর্শনে।
জানি, আজও প্রতিদিন নিয়ম করে, একই সময়ে, একই ছন্দে স্টকহোমের রাজ প্রাসাদের ধূসর চত্বরে একদল সেনা কুচকাওয়াজ করে যায়, রয়্যাল গার্ড বদল হয়। এক দল যায় আর নতুন এক দল এসে তার জায়গা নেয় – শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কিছুই বাদ যায় না, এই তো পৃথিবীর নিয়ম, এক কঠিন নিয়মে বদ্ধ পৃথিবী, মানুষ যে শুধুই সেই নিয়মকেই পালন করে চলে।