বুদার মাথিয়াস চার্চে (Matthias Church, Budapest, Hungary)

সকালের ঝকঝকে রোদ মাথিয়াস চার্চের রং বেরঙের টাইলসের উপরে পড়ে ঠিকরে পড়েছে, উজ্জ্বলতায় চোখ যেন ধাঁধিয়ে যায়। ঠিক আগের দিনেই এক পশলা বৃষ্টি ধুয়ে দিয়েছিল হাঙ্গেরির বুদার ক্যাসল ডিসট্রিক্টের সবচেয়ে সুন্দর চার্চের ছাদটি।

নানা রঙের হীরক আকৃতির টাইলসের ছাদ, আকাশ ছোঁয়া বেল টাওয়ার, বেল টাওয়ার ঘিরে নানা আকৃতির  gargoyles – সব মিলিয়ে বুদার এই ক্যাসল ডিসট্রিক্টের এই অপূর্ব ক্যাথিড্রাল টুরিস্টদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্ত্যব্য।

ইউরোপের প্রতিটি চার্চ, ক্যাথিড্রালের গায়ে এক গল্প, এক ইতিহাস, ইউরোপের ইতিহাসের উত্থান পতনের নানান কাহিনী, কিংবদন্তি জড়িয়ে আছে। যদিও বলা হয় এগারো শতাব্দীর এই চার্চ বারোক স্টাইলে স্থাপনা হয়েছিল, কিন্তু সেই আসল চার্চের কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি।

পরে, চোদ্দ শতাব্দীতে গথিক স্থাপত্য অনুসরণে এই চার্চ সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তৈরি হয়। মাঝের শতাব্দীতে হাঙ্গেরির ইতিহাসের নানান উত্থান পতনের উত্তাপ এই চার্চের উপরে লেগেছিল। সেই সময়ে হাঙ্গেরি প্রায় দেড়শ বছর তুর্কীর দখলে থাকার সময় এই চার্চ বুদা শহরের প্রধান এক মসজিদে পরিণত হয়েছিল। এমনকি, তুর্কীর দখলে থাকাকালীন এই চার্চের বহু দামী জিনিস পাচার হয়ে গিয়েছিল, বা ছিনতাই হয়েছিল ও ভেতরের বহু দেওয়াল ছবি ‘ফ্রেস্কো’র উপরে সাদা রং লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সতেরো শতাব্দীর শেষের দিকে তুর্কীর সঙ্গে ইউরোপের যুদ্ধে কামানের গোলায় তুর্কী অধিকৃত এই চার্চের এক দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ে ও দেওয়ালের ভেতর থেকে ম্যাডোনার মূর্তি বেড়িয়ে পড়ে – মসজিদে প্রার্থনারত তুর্কীর সেনা দলের সামনে হঠাৎ করে ম্যাডোনার মূর্তির আবির্ভাব, ওদের মনোবল ভেঙ্গে দেয় ও সেই দিনেই বুদা তুর্কীর দখল মুক্ত হয়।

হাঙ্গেরি তুর্কীর দখল মুক্ত হওয়ার পরে এই চার্চকে পুনরায় বারোক স্টাইলে তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সম্পূর্ণ হয় চোদ্দ শতাব্দীর গথিক স্টাইলে। এই চার্চকে হাঙ্গেরির মানুষ রাজ্যাভিষেকের চার্চ বলেও মনে করে – হাঙ্গেরির শেষ রাজার অভিষেকও এই চার্চে সম্পন্ন হয়েছিল।

সময় বয়ে যায়, শতাব্দী পেরিয়ে যায়, কিন্তু, এই চার্চের দুঃসময় যেন পিছু ছাড়ে না – দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধেও এই চার্চের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয়। যুদ্ধের সময় এই চার্চ জার্মানি ও রাশিয়ার সেনা দলের ক্যাম্প ছিল। তবে, সব দুঃসময় শেষ হয়, সুসময় আসে – উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই চার্চ ও চার্চের নানান সম্পত্তিকে সম্পূর্ণ ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

রবিবারের উজ্জ্বল সকালে কনভেন্টের একদল বাচ্চাদের কলকাকলিতে পরিপূর্ণ এই চার্চ চত্বর, ভেতরে শুরু হতে চলেছে সার্ভিস। শান্ত পরিবেশ, উদার দানিয়ুবের দৃশ্য, মৃদু হাওয়া, মনোরম পরিবেশ – মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত দুঃসময় বন্দী থাক ইতিহাসের পাতায়, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হয়ে উঠুক উজ্জ্বল, সম্ভাবনাময়, সৌভাতৃত্বময়, পৃথিবীর মানুষ হাসুক আনন্দে, বাঁচুক আনন্দে – শতাব্দী প্রাচীন চার্চের সামনে দাঁড়িয়ে হাজার মানুষ হয়তো সেটাই কামনা করে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Eastern-Europe, Europe, Hungary, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s