ভিলিনুসের ক্যাসলে (Gediminas’ Tower, Vilnius, Lithuania)

ভিলিনুস শহরের পুরনো পথে হাঁটতে হাঁটতে দূর টিলা পাহাড়ের উপরে লাল এক ক্যাসল বা দুর্গ বহু টুরিস্টকে কৌতূহলী করে – পাথরে বাঁধানো ঘোরানো পথ ধরে অনেকেই তাই সেই দিকে হাঁটে। এমনকি, ভিলিনুসে এসে আমরাও ঐ পাহাড়ের লাল টাওয়ার দেখে কৌতূহলী হই।

লিথুনিয়ার ডিউক Gediminas চোদ্দ শতাব্দীতে এই ক্যাসল তৈরি করে, তাই প্রাচীন ক্যাসলের এই অবশেষের নাম Gediminas  টাওয়ার। অবশ্য চোদ্দ শতাব্দীতে এই ক্যাসল কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল। আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে Gediminas  এর বংশধর ইট দিয়ে পুনরায় তৈরি করে। বহুদিনের অবহেলিত এই ক্যাসল ধ্বংসের মুখেই ছিল।

লিথুনিয়া স্বাধীনতার পরে এই টাওয়ারকে সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, ও একদম উপরে লিথুনিয়ার পতাকা লাগানো হয়। চোদ্দ শতাব্দীর ভিলিনুসের আসল ঐতিহাসিক ক্যাসল বহু আগেই ধ্বংস হয়েছিল, আর রয়ে গেছে আপার ক্যাসলের এই অবশেষ – Gediminas’ Tower, বর্তমানে লিথুনিয়ার ন্যাশনাল মিউজিয়াম। অবশ্য, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধেও এই ক্যাসল প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

যে কোন ঐতিহাসিক ক্যাসলের সঙ্গে কোন এক গল্প জড়িয়ে থাকবে না, সে কি হয়! এই ক্যাসল ও তাকে ঘিরে ভিলিনুস শহরটি জন্ম নেয় এক স্বপ্ন থেকে। লিথুনিয়ার গ্র্যান্ড ডিউক Gediminas শিকার থেকে ফেরার পথে পাহাড়ের ঢালে এখানেই বিশ্রামের জন্যে রাত কাটিয়েছিলেন – রাতে স্বপ্ন দেখেন পাহাড়ের উপরে এক লোহার নেকড়ে বিকট ভাবে চিৎকার করছে – যেন একশোটা নেকড়ে একসঙ্গে চিৎকার করছে।

যাইহোক, সকালে ডিউক পুরোহিতকে স্বপ্নের মানে জানতে চাইলেন। পুরোহিত জানালেন লোহার নেকড়ের চিৎকার মানে – এখানে একটা শহর, লিথুনিয়ার ভবিষ্যৎ রাজধানী শহর তৈরি করতে হবে – আর পাহাড়ের উপরে হবে ক্যাসল, সারা বিশ্বে এই শহরের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে, ও লিথুনিয়ার রাজধানী হবে এই শহর। স্বপ্নের এই আজ্ঞা শুনে তো ডিউক আর দেরি না করে লিথুনিয়ার ভবিষ্যৎ রাজধানীর ক্যাসল তৈরি করে দিলেন – জন্ম হল ভিলিনুসের।

আর, আজ আমরা সেই স্বপ্নে দেখা ঐতিহাসিক ক্যাসলের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে পুরনো ও নতুন ভিলিনুসের বিস্তারিত দৃশ্য দেখে অভিভূত হই – ভালো লাগে। এখানে এসে একবারেই দেখে নেওয়া যায় – কেমন করে কয়েকশো বছর ধরে ধীরে ধীরে মানুষ একটি শহর তৈরি করে বসতি গড়ছে। ঘন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে লাল ইটের তৈরি এই টাওয়ার এক সুন্দর ছবি তৈরি করে – পথ চলা এখানে বড়ই মনোরম।

যদিও ভিলিনুস লিথুনিয়ার রাজধানী শহর, তবুও পুরনো ভিলিনুসের গলিতে যেন এক  অদ্ভুত শান্ত ভাব, নির্জনতা জড়ানো। জুলাইয়ের ঝকঝকে উজ্জ্বল দুপুরে এই শহর যেন এক ধীর লয়ে চলে – দুপুরের শুনশান রাস্তা, অচেনা শহর, অচেনা গলি, হেঁটে চলি অচেনা পথে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Lithuania, Northern-Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান