ল্যুভরের ভেতর যখন হাজার বছরের ইতিহাসকে বদ্ধ করে হাজার হাজার টুরিস্টকে আকর্ষণ করে, ল্যুভরের বাইরে খোলা ঐতিহাসিক চত্বর কিন্তু উজ্জ্বল দিনে, বর্তমানের প্রাণচঞ্চলতায় ভরপুর, টুরিস্টদের আনাগোনায় ব্যস্ত, স্বতঃস্ফূর্ত।
সে একাগ্র মনে ক্যানভাসে তুলির ছোঁয়ায় শিল্পীর ছবি আঁকাই হোক বা আধুনিক ক্যামেরায় মানুষের ছবি তোলার অগাধ স্বাধীনতাই হোক – সবই এখানে মিলেমিশে সহাবস্থান করে। এখানে চারিদিকের স্থাপত্যে, পরিবেশে যদিও বাজে বহু পুরনো দিনের সুর, কিন্তু, আধুনিকতাও এখানে সমান মর্যাদায় স্থান পেয়েছে – তার প্রমান ঐতিহাসিক ল্যুভরে মিউজিয়ামের সামনের ঐ বিশাল কাঁচ পিরামিড।
প্রথমে ল্যুভরে চত্বরে এই কাঁচ পিরামিড তৈরির সময়, ল্যুভরের ঐতিহাসিক চত্বরের ঐতিহ্যের ঠিক মাঝে অত্যাধুনিক ধরণের অতিকায় এক কাঁচ পিরামিডের অবস্থান প্রাচীনতার মর্যাদাকে, ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে, ক্লাসিক সৌন্দর্যকে খর্ব করবে না তো? কেমন কিম্ভূত লাগবে না তো? এই নিয়ে প্যারিস বাসীর খুবই শঙ্কা ছিল, ছিল সন্দেহ – আর সেই শঙ্কা ও সন্দেহ প্রতিবাদে পরিণত হয়েছিল।
কিন্তু, ল্যুভরের লড়াই আধুনিকতার সঙ্গে নয়, পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নয়, নতুনকে সাদরে বরণ করে নেওয়াই প্রাচীনের ধর্ম, আর ল্যুভরের ঐ কাঁচ পিরামিড যেন সেই সত্যই প্রমান করে দেয়।
আসলে ল্যুভরে চত্বরের কাঁচ পিরামিডটি হল ল্যুভরের ভেতরে ঢোকার সদর দরজা। জনসাধারণের জন্যে ল্যুভরের প্রাচীন দরজা খুলে দেওয়ার পরে এতো টুরিস্ট সেই দরজা দিয়ে আসা যাওয়া করতো, যে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। এক নতুন দরজার দরকার হয়েছিল – আর যখন ল্যুভরে প্রাসাদে ঢোকার প্রধান দরজা, তার নক্সায় একটু অভিনবত্ব তো থাকতেই হবে।
যাইহোক, নতুনকে পুরনোর সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিলিয়ে দিতে প্যারিসের জুড়ি মেলা ভার। কাঁচ পিরামিড ল্যুভরের চত্বর দখল করে নিল – আর আজ সেটা প্যারিস ও ল্যুভরের এক উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক বলা যায়।
রাতে হিরের তৈরি এক পিরামিডের মতো উজ্জ্বল আলোর ছটায় সাজিয়ে রাখে ল্যুভরে চত্বর, দিনে ভরিয়ে রাখে টুরিস্টের আনাগোনায়। ঐতিহাসিক ল্যুভরে চত্বরে আধুনিক স্থাপত্যের কাণ্ডারি এই কাঁচ পিরামিড প্রথমেই মানুষের নজর কেড়ে নেয় – হোক না নবীন, তবুও জায়গা করে নেয় প্রাচীনের মাঝে, স্বমহিমায় বিরাজ করে – তাই, ল্যুভরে চত্বরের কাঁচ পিরামিডকে এড়িয়ে চলা বেশ মুশকিল। তাইতো, শিল্পীর তুলিতে ধরা পরে আধুনিক ও প্রাচীন ল্যুভরের সৌন্দর্য। আর প্রচুর টুরিস্টের ক্যামেরায় ধরা দেয় আধুনিক ও প্রাচীন ল্যুভরে। সৌন্দর্য যেখানে মুখ্য, মাধ্যম সেখানে গৌণ হয়ে যায়।