ল্যুভরের গ্র্যান্ড গ্যালারী (Grande Galeri, Louvre, Paris)

ল্যুভরে মিউজিয়ামে ঢুকেই দীর্ঘ এক গ্যালারীর ভিড়ের স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পথ চলা ও ছবি দেখা। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভিড় হালকা হয়ে যায় – বিশাল মিউজিয়ামের নানান ঘরে ছড়িয়ে পড়ে ভিড়। দীর্ঘ এই গ্যালারী ‘Grande Galerie’ সম্পূর্ণ ভাবে ফ্রান্স ও ইতালির প্রাচীন চিত্র শিল্প প্রদর্শনের জন্যে নিবেদিত।

নেপোলিয়ানের সময় ইতালি ও অষ্ট্রিয়ার সঙ্গে এক শান্তি চুক্তিতে ইতালির ভ্যাটিকান ও ভেনেশিয়ান রিপাবলিকের প্রচুর প্রাচীন চিত্র ও ভাস্কর্য ফ্রান্স নিজের অধিকারে করে নেয়। সেই ছবির বেশীর ভাগ ছবিই ইতালির রেনেসাঁ সময়ের আঁকা ছিল। তাছাড়া, নেপোলিয়ানের নিজস্ব লুটতরাজও ল্যুভরে মিউজিয়ামের ইতালিয়ান শিল্প সংগ্রহ বাড়িয়েছে – আর সেই শিল্প সংগ্রহের ধরণ গ্র্যান্ড গ্যালারীর দু’দিকের দেওয়ালে প্রকাশ পায়।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত মোনালিসা ছবিটি যদিও পাশের এক হলে বুলেট প্রুফ কাঁচের ভেতরে সযত্নে সুরক্ষিত। কিন্তু, এই গ্র্যান্ড গ্যালারিতে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা অন্যান্য অনেক ছবি নজরে পড়ে, সেই ছবিরা মোনালিসা ছবিটির মতো বিখ্যাত হতে পারে নি, তা যদিও এক রহস্য, কিন্তু লিওনার্দো দা ভিঞ্চির শিল্প চেতনার নিজস্বতায় তারাও অনন্য, স্বতন্ত্র – উপস্থিত দর্শকদের কৌতূহলী করে তোলে।

ফরাসী বিপ্লবের আগে এই দীর্ঘ গ্যালারী বা করিডোর দিয়ে ল্যুভরে প্রাসাদ ও তুলারিস প্রাসাদ সরাসরি ভাবে যুক্ত ছিল – সেই সময়ে ল্যুভরে প্রাসাদের এই অংশ পৃথিবীর দীর্ঘ বিল্ডিং হিসাবে বিখ্যাত ছিল। সিয়েন নদীর ধার ঘেঁষা এই দীর্ঘ গ্যালারী ল্যুভরে মিউজিয়ামের এক অন্যতম আকর্ষণ বলা যায় – ল্যুভরে মিউজিয়ামে ঢুকে পড়লে এখানে তো একবার আসতেই হয়।

ফরাসী বিপ্লবে তুলারিস প্রাসাদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, ও ল্যুভরে প্রাসাদের সঙ্গে তুলারিসের সংযোগ বন্ধ করা হয়, তখন এই দীর্ঘ করিডোর দৈর্ঘ্যে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। পরে, যখন ল্যুভরে প্রাসাদ পাবলিক মিউজিয়ামে পরিণত হল, এই দীর্ঘ করিডোর হয়ে গেল ‘গ্র্যান্ড গ্যালারী’।

ফরাসী বিপ্লবের পরে যখন এই রাজ প্রাসাদ পাবলিক মিউজিয়ামে পরিণত হল, রাজপরিবার থেকে শুরু করে ফ্রান্সের সমস্ত বড়লোক শিল্প সংগ্রাহকদের সংগ্রহীত শিল্প জাতীয় সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই সময় ফ্রান্সের নানা জায়গা থেকে ছবি সংগ্রহ করে ফ্রান্সের জনসাধারণের জন্যে এই গ্র্যান্ড গ্যালারীতেই প্রদর্শন করা হয়েছিল – সেদিনটি নাকি ফরাসীদের কাছে ছিল বিজয় উৎসবের দিন। দু’পাশে হাজার ছবি সহ এই দীর্ঘ গ্যালারী তাই ফরাসীদের খুবই প্রিয় জায়গা।

ইউরোপের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রচুর যুদ্ধ বিগ্রহ, হানাহানি হয়েছে, কিন্তু ইতালির সেই মহান শিল্পীরা যেন তার আঁচই পায় নি – নিমগ্ন ছিল মহান সৃষ্টির কাজে, আর তাঁদের সেই শতাব্দী জয়ী সৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে আজও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করে – এক শিল্পীর কাছে তার সৃষ্টির অমরত্বের চেয়ে বড় আর কি হতে পারে? এক অমর সৃষ্টি – যা পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে, শিল্পীর আত্মা হয়তো তাই চায়, আর সেই শিল্পেই হয়তো বা পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকে শিল্পী।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান